নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে পুলিশের আরোপ করা বিধিনিষেধ ছিল। তারপরও বর্ষবরণের উদযাপনে মেতে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা স্পর্শ করামাত্রই ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ চিৎকার ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। একইসঙ্গে বাইরে জমায়েত না করতে পারলেও বাড়ির ছাদ থেকে ছুঁড়ে দেওয়া আতশবাজির আলোকচ্ছটায় রাঙিয়ে শুরু হলো গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির নতুন বছর ২০২১। একইসঙ্গে ঢাকার আকাশে উড়তে দেখা গেছে ফানুসও।
খ্রিষ্টীয় এই নববর্ষকে ঘিরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ছিল বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ। আতশবাজি ফোটানোতেও ছিল নিষেধাজ্ঞা। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা মানেনি কেউ। রাজধানীর টিকাটুলি থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, তেজগাঁও, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা— সবখানেই আকাশ আলোকিত হয়েছে আতশবাজির আলোয়। তার শব্দেও ২০২১ সাল জানান দিয়েছে— আমি এসেছি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নববর্ষের উদযাপন অনেকটাই সীমাবদ্ধ ছিল ঘরে। বাইরে বের হতে না পেরে মানুষজন রাত ১২টা বাজার আগে থেকেই জড়ো হতে থাকেন বাড়ির ছাদে ছাড়ে। নতুন বছর শুরু হতে না হতেই শুরু হয় তাদের উদযাপন। আতশবাজি, ফানুসের সঙ্গে সঙ্গে কোথাও কোথাও সাউন্ডবক্সে বেজেছে গানও।
রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুর রহমান নববর্ষ উদযাপন করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছিলেন বাসার ছাদে। তিনি যে বাড়ির ভাড়াটিয়া, সেখানকার অন্যান্য ফ্ল্যাটের অধিবাসীরাও তখন ছাদেই ছিলেন। মাহমুদুর বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে বড় কোনো আয়োজন তো নেই। কিন্তু নতুন বছরকে তো বরণও করতে হবে। তাই সবাই মিলে ছাদে এসেছি। পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাড়ির ছোটদের আবদারে আতশবাজি কেনা হয়নি। কিন্তু আশপাশের অনেক বাড়ির ছাড়েই আতশবাজি ফুটতে দেখেছি।
তেজগাঁও নাখালপাড়ার বাসিন্দা মো. বশির জানালেন, কেবল বাড়ির ছাদে নয়, বর্ষবরণের মুহূর্তে রাস্তাতেও ছিল তরুণদের আনাগোনা। এই এলাকাতেও বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে উড়েছে আতশবাজি। কোনো কোনো বাড়িতে বাজছে গান।
বর্ষবরণের এই রাত তথা ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’কে ঘিরে অবশ্য ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল ডিএমপি। সন্ধ্যার পর থেকে সীমিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানচলাচল। গুলশান-বনানী এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা। এসব এলাকায় রাত ৮টার পর বহিরাগত প্রবেশ রীতিমতো নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া বিকেল ৫টার পর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল হাতিরঝিল এলাকায়। সন্ধ্যা ৬টার পর রাজধানীর সব বার এবং ৮টার পর ফাস্টফুডের দোকান বন্ধ করতে বলা হয়। রাত ৯টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টহল পুলিশকে এলাকার মুদি দোকানগুলোও বন্ধ করতে বলতে দেখা যায়।
ডিএমপি’র বিধিনিষেধে বলা হয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত আকারে আবাসিক হোটেলগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারবে। তবে কোনো ডিজে পার্টি আয়োজন করা যাবে না। এছাড়া ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি ভোর ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে কোনো ধরনের লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্রও বহন না করতে অনুরোধ করা হয়।
শেষ পর্যন্ত ডিএমপি’র বিধিনিষেধের কিছু কিছু পালন করা হলেও ঢাকাবাসী ঘরোয়া আয়োজনের মাধ্যমে অনেক বিধিনিষেধেরই তোয়াক্কা করেনি। কালাচাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা রবিউল হাসান যেমন বলছেন, বিধিনিষেধ আরোপটাও যৌক্তিক হতে পারত। নতুন বছর বরণ করার উচ্ছ্বাস সবার মধ্যেই থাকে। করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই কেউ বড় কোনো আয়োজন করছে না। ফলে বাসাবাড়ির মধ্যে থেকে যেটুকু উৎসব, সেটুকু করা যেতেই পারে।
সান নিউজ/এসএম