নিজস্ব প্রতিনিধি কক্সবাজার : কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের আরেকটি দল ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে তাদের চট্টগ্রামের ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। সেখান থেকে মঙ্গলবার তাদের ভাসানচরের উদ্দেশ্যে উখিয়া থেকে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। এবারের দলটিতে ৭শ’থেকে ৮শ’ রোহিঙ্গা থাকতে পারে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর দুপুরে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে স্থানান্তরের প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা হাসিমুখে ভাসানচরে পৌঁছেছিল।
এ মাসের শুরুতে ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ওই দলটির সদস্যরা এসেছিল টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে। তাদের একদিন আগে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে গাড়িতে এনে চট্টগ্রামে শাহিন স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। সূত্রে জানা গেছে, এবারও সেভাবে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের।
তবে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও জবাব দেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে দ্বিতীয় দফায় আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে। সোমবার থেকে তাদের সেখানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
এদিকে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দলটি ভাসানচরে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বেচ্ছায় যেতে রাজি ৭শ’রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে হস্তান্তরের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
ভাসানচর প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩) উপপ্রকল্প পরিচালক কমান্ডার এম আনোয়ারুল কবির জানান, ‘মঙ্গলবার কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের একটি দল ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তাদের গ্রহণের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে দ্বিতীয় দফায় এ দলে কতজন, সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ‘তাদের ক্যাম্প থেকে স্বেচ্ছায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু লোকজনের স্বজন আগে থেকেই ভাসানচরে রয়েছে। সোমবার সকালে এসব রোহিঙ্গাকে নেওয়ার জন্য ক্যাম্পে বাস আসার কথা রয়েছে । তাদের নিয়ে এসে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট ও কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ঘাটে প্রক্রিয়া শেষ করে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে পাঠানো হবে।’
টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল কালাম জানান, তার শিবির থেকে প্রায় ৩০টি পরিবার স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে প্রস্তুতি শেষ করেছে। তারা সোমবার সকালে ভাসানচরে যেতে ক্যাম্প ত্যাগ করবে। প্রথম বারেও তার ক্যাম্প থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার ভাসানচরে গেছেন।
জানতে চাইলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-এর অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোশারফ হোসেন জানান, 'স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দলটি সোমবার সকালে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। সেখান থেকে মঙ্গলবার সকালে নৌ-বাহিনীর তত্ত্বাবধানে তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। এই দলে ৭শ’ থেকে ৮শ’ রোহিঙ্গার ভাসানচরে যাওয়ার কথা রয়েছে। আমরাও ভাসানচরে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।'
ভাসানচর থেকে মুঠোফোনে মো. ইসমাইল (১৮) নামে এক রোহিঙ্গা কিশোর বলে, ‘টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পরিবারের সঙ্গে ৪ ডিসেম্বর ভাসানচরে এসেছি। এখানে আমরা সবাই খুব ভালো আছি। এখানকার পরিবেশ ক্যাম্প চেয়ে অনেক ভালো। এই ভাসানচর দ্বীপে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নৌবাহিনীর সদস্যরা খুব ভালো ব্যবহার করেন। তারা সব সময় সহায়তা করেন আমাদের। ক্যাম্পে থেকে যাওয়া আমার এক বোন এখানে চলে আসার জন্য বারবার ফোন করছে।’
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
সান নিউজ/পিডিকে