নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষা-গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে কর্তৃপক্ষ। এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
চার ধাপে ৩০ বছরের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে থাকবে না আবাসন ও ক্লাসরুম সংকট- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে নকশা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। নকশা অনুযায়ী ভেঙে ফেলা হবে পুরাতন ভবন।
নকশার দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপূর্তের কর্মকর্তা আলী আশরাফ দেওয়ান বলেন, নকশা তৈরির জন্য তাকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আকারে কিছুই এখনো হয়নি। তবে নতুন ভবন করতে পুরাতন ভবন ভাঙতে হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র'র (টিএসসি) বর্তমান ভবনটিকে ‘আধুনিক স্থাপত্যের সুন্দর নিদর্শন’ উল্লেখ করে এটিকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেউ কেউ৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, পৃথিবীর নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ছবি দেখেই চেনা যায় কিছু ঐতিহ্য ধারণ করা স্থাপনার মাধ্যমে। শত শত বছরের পুরোনো হয়ে গেলেও এগুলোকে সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন স্থাপনার মধ্যে আছে কার্জন হল, এসএম হল ও টিএসসি। এর মধ্যে টিএসসি ষাটের দশকে নির্মিত অপেক্ষাকৃত আধুনিক স্থাপত্যের একটি সুন্দর নিদর্শন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ববর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ঐতিহ্য ধারণ করে এই টিএসসি। রক্ষণাবেক্ষণের বদলে এটিকে ভেঙে এখন বহুতল ভবন নির্মাণের আয়োজন চলছে। শুধু শুধু অর্থনীতিবিদদেরই সমালোচনা করা হয় যে তারা সবকিছুর বাজারদর বোঝে, কিন্তু কোনো কিছুর প্রকৃত মূল্য বোঝে না!
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টিএসসির সামাজিক–রাজনৈতিক গুরুত্ব ও ঐতিহ্য আছে। এটি ভেঙে নাকি এখন বহুতল ভবন বানানো হবে! এমনিতেই মেট্রোরেল দিয়ে টিএসসির সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি চোখে ভাসছে, আর এখন বহুতল ভবন। আমরা উন্নয়ন বলতে যখন বহুতল ভবন বুঝি, তখন “ইতিহাস ঐতিহ্যের খেতা পুরি টাইপের” কার্যক্রম মনটা ভারাক্রান্ত করে দিল। লাইব্রেরি ভেঙে বহুতল ভবন বানানোর কথা শুনলে তা–ও মনটা খুশি হতো। যেটা দরকার, সেটা করা হয় না। যেটা প্রায়োরিটি, সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
সান নিউজ/এম