নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা মহামারির সময়ে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপরিশোধিত বিল কয়েক হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর সিস্টেম লসও আগের তুলনায় বেশি। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত অক্টোবরের এক হিসাবে দেখা যায়, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারি বিভিন্ন কোম্পানি ও বেসরকারি খাত রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ৫টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির মধ্যে একমাত্র ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ছাড়া সব বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির সিস্টেম লস বেড়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সিস্টেম লস এখনও ডাবল ডিজিটে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে পিডিবির সিস্টেম লস ছিল সাড়ে ৯ শতাংশ। অথচ চলতি বছরের অক্টোবর মাসে এসে সিস্টেম লস দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সিস্টেম লস ছিল ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ, চলতি বছরে অক্টোবরে সেটা হয়েছে ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সিস্টেম লস ছিল ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে অক্টোবরে এসে সেটা হয়েছে ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
অন্যদিকে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির সিস্টেম লস ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ ছিল। সেটা দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) সিস্টেম লস ছিল ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সেটা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি সিস্টেম লস বেড়েছে নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকোর)। কোম্পানিটির গত বছরের অক্টোবরে সিস্টেম লস ছিল ৯ দশমিক ২১ শতাংশ। চলতি বছরের একই সময়ে এসে হয়েছে ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। এ ছাড়া সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় বিতরণ লস ও সিস্টেম লস বেড়েছে। অক্টোবরে যেটা ছিল গড়ে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ সেটা বর্তমানে ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ।
বিদ্যুত ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিল আদায়ের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা তৈরি হয়। ফলে সরকারি-বেসরকারি খাতে অনেক বিল বকেয়া পড়ে গেছে। ইতোমধ্যে বিল আদায়ে তৎপর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি বিল আদায়ের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
শুধু সিস্টেমলসই নয়, বেড়েছে বকেয়া বিলের পরিমাণও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি পর্যায়ের শিল্প মালিক বা উদ্যোক্তরা অনেকেই করোনার কারণে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে টালবাহানা করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো সরকারি ও বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে।
তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের বড় বড় গ্রাহক যারা তাদের অধিকাংশ সরকারের রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফলে শতকোটি টাকা বকেয়া আছে এমন অনেক কোম্পানির বিল আদায় করতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা অসহায় হয়ে পড়ছেন। তাদের ইচ্ছেমতো বিল আদায় করতে হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে। যার মধ্যে পিডিবির বকেয়া ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা, বিআরইবির ৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা, ডিপিডিসির বকেয়া ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা, ডেসকোর বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ৭৫২ কোটি টাকা; ওজোপাডিকোর বকেয়া সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা, নেসকোর বকেয়া ৬৮৬ কোটি টাকা।
এদিকে পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া জমা পড়েছে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে বকেয়া ২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। তবে এসব বিল পরিশোধ প্রক্রিয়া চলমান। সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস বিল বকেয়া ১ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা।
সরকারি-বেসরকারি সার কারখানাগুলোর মধ্যে গ্যাস বিল বকেয়া প্রায় ২২৮ কোটি টাকা। শিল্পকারখানাগুলোতে বকেয়া ১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় গ্যাস বিল বকেয়া ১০০ কোটি টাকা এবং আবাসিক খাতে বকেয়া ২ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। এসব বকেয়া বিল আদায় চলমান হওয়ায় বকেয়া বিল কম-বেশি হতে পারে যে কোনও সময়। এ ছাড়া সিএনজি খাতে ফিড গ্যাস বিল বকেয়া ৮৫৪ কোটি টাকা এবং চা বাগানে বকেয়া ১০ কোটি টাকা।
সান নিউজ/এসএ