জাতীয়

বিচারপ্রার্থীকে যেন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে না হয়

নিজস্ব প্রতিনিধি : বিচার চাইতে এসে আদালতের বারান্দায় যেন বিচারপ্রার্থীকে বছরের পর বছর ঘুরতে না হয়, সেজন্য বিচারপতিদের নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। একই সঙ্গে চলমান মামলার সংখ্যা আয়ত্তে আনতে বিচারপতিদের আরও বেশি কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিওবার্তায় বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’। তাই মনে রাখতে হবে একজন বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার পাওয়া তার অধিকার। আর নাগরিকের সে অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

‘এখানে দয়া বা আনুকূল্যের কোনো বিষয় নেই। দেশ, জনগণ ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে বিচারক, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সবাই তাদের মেধা ও মনন প্রয়োগের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন- সুপ্রিম কোর্ট দিবসে এটাই সবার প্রত্যাশা। ’

আবদুল হামিদ বলেন, আমি নিজে একজন আইনজীবী হিসেবে জানি বিচারকাজ কত কঠিন ও জটিল। বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় একজন বিচারককে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু তারপরও আমি বলবো মামলা দিন দিন যে হারে বাড়ছে সেটাকে আয়ত্তের মধ্যে আনতে হলে বিচারকদের আরো বেশি কাজ করতে হবে।

‘সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং বিচারকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে মামলার রায় হওয়ার পর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় দিনের পর দিন ঘোরাঘুরি করতে না হয়। ’

দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আইনজীবীদের আন্তরিকতা সততার সঙ্গে সমর্থন প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আইনজীবীরা বিচার ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ। আইনজীবীদের সহায়তা ছাড়া বিচারের কাজ কিছুতেই অগ্রসর হতে পারে না। আমাদের সংবিধান প্রণয়নের সময় যেমন দেশের প্রথিতযশা আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তেমনি যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই আদালতের ডাকে সাড়া দিয়ে আইনজীবীরা এমিকাস কিউরি হিসেবে তাদের মতামত দিয়ে আদালতকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছেন।

‘সুপ্রিম কোর্ট দিবসের এই অনুষ্ঠানে আমি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমি আশা করি, জ্ঞানের চর্চায় আইনজীবীরা আগের চেয়ে আরো এগিয়ে যাবেন এবং তাদের মেধা, প্রজ্ঞা, সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সাহায্য করবেন। ’

রাষ্ট্রপতি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম হলো শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ তৈরি করা। উন্নয়নের সঙ্গে ন্যায়বিচার এবং আইন-আদালতের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। একটা কথা মনে রাখতে হবে, বিরোধের মীমাংসা যথাযথভাবে না হলে আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে। আর এই প্রক্রিয়া বারবার চলতে থাকলে রাষ্ট্র ও সমাজে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করে জনগণের ক্ষোভ প্রশমন করে। এতে সমাজে বৈষম্য দূরীভূত হয় এবং রাষ্ট্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। আর এভাবেই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। নাগরিকদের আয় ও সুবিধার ভিন্নতা বা আর্থিকভাবে অসচ্ছলতার কারণে কেউ যাতে ন্যায় বিচার বা আইনের সমান আশ্রয়লাভ থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করতে গঠিত হয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা। আশা করি, এর মাধ্যমে দেশের আদালতে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও দুর্গত বিচারপ্রার্থীরা মামলার শুরু থেকে নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত সব আইনগত সহায়তা পাবে।

প্রযুক্তি ব্যবহার প্রসঙ্গে আবদুল হামিদ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এই সময়েও মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আদালত তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য ৯ মে, ২০২০ তারিখে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যা পরবর্তীসময়ে আইনে পরিণত হয়। ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আদালত প্রাঙ্গণে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমি এ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে অনলাইন কজলিস্ট চালু হয়েছে এবং অনলাইন বেল কনফার্মেশন ব্যবস্থা কার্যকরভাবে চলছে। আমি একইভাবে আদালতের সমস্ত কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু ‘কোর্ট অব রেকর্ড’ সেহেতু এর সব নথি এবং মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রমকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।

৭৫ পরবর্তী সময়ের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, নিজেদের স্বার্থে জাতীয় সংসদকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে ৫ম ও ৭ম সংশোধনী এনে সেসব কুকীর্তিকে বৈধতা দেওয়ার হীন চেষ্টা করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। নানা বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন সুসংহত করতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।

সান নিউজ/পিডিকে/এস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

ঢাকায় বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি দল

নিজস্ব প্রতিবেদক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাই...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

শেখ হাসিনাসহ ৬১ জনের নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জে আদালতের নির্দেশে সাবেক প্রধা...

গুমের সঙ্গে জড়িতরা পার পাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গ জড়িতরা পার পায়নি...

বাংলাদেশিদের পাঁচ দেশ ভ্রমণে সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের ৫ দেশে যেতে চাওয়া বাংলাদেশিদের জন...

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক : দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে টস জিতে ও...

কলম্বিয়ায় গেরিলা হামলায় নিহত ৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কলম্বিয়ার আনোরিতে ন্যাশনাল লিবারেশন আর্ম...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা