নিজস্ব প্রতিনিধি, নিলফামারী : দীর্ঘ ৫৫ বছর বন্ধ থাকার পর নীলফামারী জেলার চিলাহাটি ও ভারতের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ীর মধ্যে নতুন করে রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। আর এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্স খ্যাত ভারতের ৭ রাজ্যে এবং নেপাল ও ভুটানের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যূয়াল মিটিংয়ের পর সংযোজিত এ রেলপথ দিয়ে বাংলাদেশি পর্যটকদের দার্জিলিংসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে ভ্রমণ আরও সহজ হবে। এতে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়ানোর বিরাট লক্ষ্য রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল যোগাযোগ চালু করা হয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে এ দেশের অর্থনৈতিক সংযোগ তৈরি হলে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাশাপাশি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। মানুষের যাতায়াত বাড়ার সঙ্গে বাড়বে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা । এটি অত্যন্ত ইতিবাচক।
নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মারুফ জামাল কোয়েল বলেন, বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশই উপকৃত হবে। বিশেষ করে সেভেন সিস্টার্স, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়বে। নতুন রেলপথ চালু হওয়ায় বাণিজ্যিক খরচ অনেকটাই কমে আসবে। অন্যদিকে মোংলাবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়বে।
ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী সদস্য এমএ আজিজ বলেন, রেল যোগাযোগ চালু হলে উভয় দেশই লাভবান হবে। আমদানি-রফতানি বাড়বে। বিশেষ করে দেশের মানুষ সহজেই দার্জিলিং হয়ে ভুটান ও নেপালে যেতে পারবেন।
সঙ্গত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশভাগের পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ী পথে রেল চলাচল চালু ছিল। সেই সময়ে এ পথে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করত যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর বন্ধ হয় দুই দেশের রেল চলাচল।
২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের বন্ধ রেল সংযোগগুলো চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী পথও ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অংশের ৯ কিলোমিটারে ব্রডগেজ রেললাইন ও অবকাঠামো নির্মাণে ৮০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়। অন্যদিকে ভারতের অংশে সাড়ে ৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রকল্প নেয় ভারত সরকার।
ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে দর্শনা হয়ে যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু আছে। খুলনা থেকে বেনাপোল হয়ে কলকাতায় চলাচল করে বন্ধন এক্সপ্রেস। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে দুই পথেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ী হয়ে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ট্রেন চালুর বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। বৃস্পতিবার ১৭ ডিসেম্বর সেই সংযোগ চালু হয়।
নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ী সীমান্ত দিয়ে রেল সংযোগকে চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন সাজানো হয় অপরূপ সাজে। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সেই এলাকার হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয় সীমান্তে। তাদের সবার মাঝে ছিল বাঁধভাঙ্গা আনন্দ-উল্লাস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলিম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ, নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে বড় পর্দায় উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।
সান নিউজ/এসএ