নিজস্ব প্রতিবেদক : শারীরিক উপস্থিতিতে অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের লিখিত প্রস্তাবনা এখনও বাংলা একাডেমিকে পাঠাননি প্রকাশকরা। তবে তারা তাদের প্রস্তাবনার খসড়া তৈরি করেছেন। এতে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজনের কথা উল্লেখ করেছেন তারা।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) প্রকাশকদের পক্ষ থেকে করোনাকালে শারীরিক উপস্থিতিতে বইমেলা আয়োজনের লিখিত প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে প্রকাশকদের পক্ষ থেকে সে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়নি।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের সঙ্গে বৈঠকের পরে বাংলা একাডেমির কাছে লিখিত প্রস্তাবনা পাঠানো হবে বলে প্রকাশকরা জানান। রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নেতারা।
বৈঠকে বাংলা একাডেমির ভার্চ্যুয়াল মেলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, বইমেলা শারীরিক উপস্থিতিতেই হবে। তবে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে এবং কবে থেকে শুরু হবে- সে বিষয়ে প্রকাশকদের কাছে লিখিত প্রস্তাবনা চান একাডেমির মহাপরিচালক। একই সঙ্গে তিনি মেলা আয়োজনের জন্য প্রকাশকদের কাছে কমপক্ষে দুই মাস সময়ও চান।
এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, রোববার রাতেই আমরা দুই সমিতি বৈঠকে বসেছিলাম। সোমবার আমরা চিঠির খসড়াও প্রস্তুত করেছি। চিঠিটি বাংলা একাডেমিকে দেওয়ার আগে আমরা সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) তার সঙ্গে দেখা করার পরে আমরা আমাদের প্রস্তাবনা সংযোজন-বিয়োজন করে জমা দেবো।
প্রকাশকরা মেলার দিনক্ষণ ঠিক করেছেন জানিয়ে ফরিদ আহমেদ বলেন, আমরা ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত বইমেলা আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমিকে জানাবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেজন্য ১৫ অথবা ১৭ ডিসেম্বর আমরা লিখিত প্রস্তাব বাংলা একাডেমির কাছে পাঠাবো। ফলে বাংলা একাডেমিও মেলা আয়োজনের জন্য দুই মাস সময় পাবে।
বইমেলা সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, প্রকাশকরা শারীরিক উপস্থিতিতে বইমেলা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন। আমি তাদের কাছে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা আয়োজন করা যায় সেটির একটি লিখিত প্রস্তাবনা চেয়েছি। তারা সেটি পাঠালেই আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।
গত বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভার্চ্যুয়ালি বইমেলার আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন লেখক-সাহিত্যিকরা। বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা’ ও ‘স্বেচ্ছাচারী’ বলে গণমাধ্যমে বিবৃতিও দেন প্রকাশকরা।
এরই মধ্যে রোববার সকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত একটি প্রস্তাবনাপত্র সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
চিঠিতে একাডেমির মহাপরিচালক তাদের প্রস্তাবনায় লিখেছেন— সম্প্রতি দেশে কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে অমর একুশে বইমেলা ২০২১ সাময়িক স্থগিত করা হলো। পরিস্থিতির উন্নতি হলে উপযুক্ত সময়ে বাংলা একাডেমি বইমেলার আয়োজন করবে। তবে অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে একাডেমি ভার্চ্যুয়াল অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করতে পারে।
এতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশের সেমিনার-আলোচনা, গ্রন্থ উন্মোচন, লেখক বলছি-সহ অন্য অনুষ্ঠান আয়োজন ভার্চ্যুয়ালি হতে পারবে। একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বইমেলা ভার্চ্যুয়ালি আয়োজনের বিষয়ে বাংলা একাডেমিকে সার্বিক পরামর্শ দেবেন।
বাংলা একাডেমির পাঠানো চিঠির বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, শারীরিক উপস্থিতিতেই অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলা ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে না। তবে সময় পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে। করোনা পরিস্থিতির উপরে এসব কিছু নির্ভর করছে। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে মেলা যেন ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন করা যায়। তবে সবার আগে মানুষের জীবন। সেটি মাথায় রেখেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সান নিউজ/এম