জাতীয়

বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী পাকিস্তানি সেনারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাঙালিদের জন্য বাঙলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । সেই স্বপ্ন পূরণে ধাপে ধাপে এগিয়েছিলেন তিনি। যেমন: ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে, ৭০ এর সাধারণ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্টতা ও বিজয়ের পরও ক্ষমতা ছাড়তে চাচ্ছিল না পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।

একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক জনসভায় সুকৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বলেন,‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’এই ঘোষণার পরই বাঙালি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে নেয়।

যদিও চূড়ান্ত প্রতিরোধ শুরু হয় ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশলাইনসসহ বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ চালানোর মধ্যে দিয়ে। সেই থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বীরদর্পে লড়াই করে চলছিল। ডিসেম্বর মাসে এসে পরাজয় বরণ করতে শুরু করে পাকিস্তান বাহিনী।

১০ ডিসেম্বরের পর মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন। এমন এক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানিরা বিদেশি সাহায্যের দিকে তাকিয়েছিল। কিন্তু সাহায্য না পেয়ে নিশ্চিত পরাজয় জেনে শেষ কামড় হিসেবে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা চূড়ান্ত করে তারা।

পাকিস্তান একদিকে যেমন সামরিক সাহায্যের প্রতীক্ষায় ছিল তেমনি তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ১১ ডিসেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভোরেন্টসভকে ডেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার হুশিয়ার করে দেন।

তিনি বলেন, ১২ ডিসেম্বর মধ্যাহ্নের আগে ভারতকে অবশ্যই যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করতে যুক্তরাষ্ট্রের সব চেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়ে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের দীর্ঘ বক্তব্যের পর অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়।

এদিকে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ২৪ ঘণ্টা দূরত্বে গভীর সমুদ্রে চলে আসে মার্কিন সপ্তম নৌবহর। সেদিন রাতে প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী আলবদর ও আলশামসের কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের ডেকে পাঠান সদর দফতরে। তার সভাপতিত্বে গোপন শলাপরামর্শ অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। তাদের হাতে ফরমান আলী তুলে দেন বুদ্ধিজীবীসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামের তালিকা।

এদিন মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ভালুকা ও হালুয়াঘাট হয়ে ময়মনসিংহ সড়কের দিকে এগিয়ে যান। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী দিনাজপুরের খানসামা থানা আক্রমণ করে। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ১৫ জন ও ৭ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের হাতে এক মেজরসহ পাকবাহিনীর ১৯ জন ধরা পড়ে। এদিন নীলফামারী হানাদারমুক্ত হয়।

এদিনই টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মিত্রবাহিনী ছত্রীসেনা নামিয়ে দেয়। রাতে টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় মিত্রবাহিনী। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে কাদেরিয়া বাহিনী। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।

নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিন অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ভারতকে পাকিস্তান ছেড়ে যেতে বলেন। তিনি বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মাতৃভূমি রক্ষায় শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। কোনও শক্তি নেই পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারে।’ এদিকে রেডিও পিকিং ঘোষণা করে, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের মাধ্যমে পাকিস্তান আক্রমণ করে মূলত চীনকেই দমন করতে চায়।’

এরই মধ্যে এপিআইয়ের জেনারেল ম্যানেজার ও সাংবাদিক নিজামউদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। তার বাসায় যখন হানা দেয়া হয় তখন তিনি বিবিসির জন্য সংবাদ লিখছিলেন। পরে তাকে হত্যা করে আলবদররা। ১২ ডিসেম্বর সকালে নরসিংদী মুক্ত হয়।

তিন দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় ভারতীয় বাহিনীর ৫টি ব্যাটালিয়ন, দুটি গোলন্দাজ রেজিমেন্ট ও ৫৭ ডিভিশনের ট্যাকটিক্যাল হেডকোয়ার্টার মেঘনা অতিক্রম করে। সূর্যাস্তের আগে জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ভারতীয় জেনারেল নাগরার বাহিনী চলে আসে টাঙ্গাইলে। বিমান থেকে অবতরণ করা ছত্রীসেনারা মিলিত হয় নাগরার বাহিনীর সঙ্গে।

সান নিউজ/এসএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শিগগিরই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া , অপেক্ষায় তারেক!

লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চলতি মাসেই দেশে ফিরতে পারেন ব...

শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

পূর্বাচলে রাজউকের প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ক্...

ওবায়দুল কাদেরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির চিঠি

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার পলাতক আসামি সাবেক মন্ত্রী ওবায়দু...

‘আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী...

যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েল ছেড়েছেন ১৭০০ ধনকুবের

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ২০২৩ সাল...

পূবাইলে হাত-পা বেঁধে ফ্ল্যাট বাসায় ডাকাতি

গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল থানাধীন হায়দরাবাদ এলাকায় ফ...

এসএসসির প্রশ্ন নিয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা, প্রথমদিনের পরীক্ষা শেষ 

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথমদিনের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল)...

ফিলিস্তিনিদের নিয়ে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের সতর্কতা যা জানা গেলো

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান আক্রমণ এবং পশ্চিম তীরে নিপীড়ন থেকে ফিলিস্তিনি...

লাল গালিচায় ক্ষেপলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সিলেটের এয়ারপ...

বাংলাদেশের ভালো ভারতের চেয়ে বেশি কেউ চায় না: জয়শঙ্কর

বাংলাদেশের ভালো ভারতের চেয়ে বেশি অন্য কেউ কামনা করে না এবং এটা তাদের ডিএনএতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা