সান নিউজ ডেস্ক:
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমনে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় প্রশাসনগুলো। সারাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে।
কক্সবাজার: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে সব পর্যটককে এলাকা ছাড়ার জন্য বুধবার (১৮ মার্চ) বেলা ৪টা থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে সৈকতে মাইকিং শুরু করা হয়। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘সরকার স্কুল-কলেজ ছুটি ঘোষণা করেছে যাতে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে। অথচ সেই সুযোগে বিনোদনের জন্য দলে দলে মানুষ ভীড় করছে কক্সবাজারে। করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের পক্ষ থেকে তাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’সমুদ্র সৈকতসহ আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘সৈকতে পর্যটক ভ্রমণে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে কিছুটা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের সব হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজে সভা-সমাবেশ, যেসব প্রোগ্রামে জনসমাগম হয় এ ধরনের অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সৈকতসহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ নিয়ম বলবৎ থাকবে।
খাগড়াছড়ি: করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখার স্বার্থে খাগড়াছড়িতেও বিদেশি পর্যটকের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। একই সঙ্গে দেশি পর্যটকদের খাগড়াছড়িতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটির সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বুধবার (১৮ মার্চ) রাত নয়টায় এ তথ্য জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। বুধবার রাতে রাঙামাটি শহরে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জনসাধারণকে সচেতন থাকতে মাইকিং করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এ সময় অপ্রয়োজনে কাউকে ঘর থেকে বের না হতে অনুরোধ জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘রাঙামাটির সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই নির্দেশনা যদি কেউ অমান্য করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।’
পতেঙ্গা: চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এখন থেকে সৈকত এলাকায় আর কোনও দর্শনার্থীকে যেতে দেওয়া হবে না। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।’
বরগুনা: বরগুনারও সব পর্যটনকেন্দ্রে আগমন নিষিদ্ধ করেছে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা পর্যটনকেন্দ্র শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত, টেংরাগিরী ইকোপার্ক ও হরিণঘাটা ইকোপার্কে সব ধরনের পর্যটকদের আগমন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি।’
কুয়াকাটা: কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশের সিনিয়র এএসপি জহিরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল পর্যটকদের আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে বাড়ী ফিরে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া হোটেল মোটেলগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হোটেলে কক্ষ বুকিং না রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া আজ থেকে সৈকতের সকল দোকানপাট সরিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের তাহিপুরের পর্যটনকন্দ্রেগুলোতে ভ্রমণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, যাদুকাটানদী, বারিকটিলা, শহীদ সিরাজলেক, ট্যাকেরঘাট, শিমুলবাগানসহ সব পর্যটন স্পটে পর্যটকদের ভ্রমণ ও যাতায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার রাতে এসব কেন্দ্রে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী।
কুমিল্লা: জনসমাগম এড়াতে কুমিল্লার নগর উদ্যান এবং শিশু পার্কসহ সরকারি-বেসরকারি সব বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান শালবন বিহার, কোটবাড়ী যাদুঘর, রূপবান মূড়া, ইটাখোলা মূড়ার মতো সব দর্শনীয় স্থানগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে নগরউদ্যান ও শিশু পার্কসহ বেশ কয়েকটি বিনোদনকেন্দ্রও । জনসমাগম এড়াতে কুমিল্লা নগরীর ঈদগাহ মাঠের ফটকেও তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।
এছাড়াও কুমিল্লার আউটার স্টেডিয়ামে চলমান বাণিজ্য মেলাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব স্থান বন্ধ থাকবে বলে জানান কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান: এদিকে সারা দেশে সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার আত্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
বুধবার বিকালে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।