নিজস্ব প্রতিবেদক : গত নভেম্বর মাসে দেশে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ৪১৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩৯ জন। গত অক্টোবর মাসের তুলনায় এ মাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩২ শতাংশেরও বেশি, আর প্রাণহানি বেড়েছে ১৪ শতাংশেরও বেশি। আর গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫২ শতাংশেরও বেশি। ওই মাসের তুলনায় নভেম্বরে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণহানিও বেড়েছে ৪৪ শতাংশের বেশি।
শনিবার (৫ ডিসেম্বর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনা রোধে ১০টি সুপারিশও করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশে ২৭৩টি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩০৪ জন, আহত হয়েছিলেন ৪৯২ জন। অক্টোবর মাসে সারাদেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১৪টিতে। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৮৪ জন, আহত হয়েছেন ৬৯৪ জন। আর নভেম্বর মাসে দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৪১৭, তাতে প্রাণহানি আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৯ জনে। তবে নভেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা অক্টোবরের তুলনায় ১২ জন কম- ৬৮২ জন।
অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বরে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ, প্রাণহানি বেশি হয়েছে ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বর মাসের সঙ্গে তুলনা করলে নভেম্বরে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫২ দশমিক ৭৪ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।
নভেম্বরের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোতে ৪৩৯ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৬৪ জন নারী, শিশু ৫৩টি। আর সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। এ মাসে ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪১ জন, যা মোট নিহতের ৩২ দশমিক ১১ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩০ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এদিকে, দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছে ৪৯ জন, যা মোট নিহতের ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ। এই সময়ে চারটি নৌদুর্ঘটনায় তিন জন নিহত ও আট জন আহত হয়েছেন। আর ২৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩২ জন, আহত সাত জন।
দুর্ঘটনায় ৩০ জন বাস যাত্রী, আট জন ট্রাক যাত্রী, ১১ জন পিকআপ যাত্রী, চার জন মাইক্রোবাস যাত্রী, ৯ জন অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী, দুই জন ট্রলি যাত্রী, লরিতে থাকা তিন জন, ১২ জন সিএনজি যাত্রী, ৬২ জন ইজিবাইক-অটোরিকশা যাত্রী, ২৮ জন নসিমন-ভটভটি-টেম্পু যাত্রী, দু’জন বাইসাইকেল আরোহী, ছয় জন রিকশা-রিকশাভ্যানযাত্রী, দু’জন স্কুলভ্যান যাত্রী এবং তিন জন পাওয়ারটিলার-আলগামন যাত্রী নিহত হয়েছেন।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ:
১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন
২. বেপরোয়া গতি
৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা
৪. বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল
৬. তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো
৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা
৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা
৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি
১০ গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি
সুপারিশসমূহ:
১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে
২. চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে
৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে
৪. পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করতে হবে
৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে
৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে
৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে
৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে
১০. “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে
সংগঠনটি আরও জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। জাতীয় মহাসড়কে সবসময় দুর্ঘটনার হার বেশি থাকলেও নভেম্বর মাসে জাতীয় মহাসড়কের তুলনায় আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মোটরসাইকেল চালক ও পথচারী নিহতের ঘটনা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে অজ্ঞতা, অবহেলা এবং ট্রাফিক আইনের প্রয়োগহীনতা এর প্রধান কারণ।
সান নিউজ/কেটি