নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে ট্রেন দুর্ঘটনা এড়িয়ে হতাহতের ঘটনা থেকে মানুষকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ জন্য স্থাপন করা হবে অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশন সিস্টেম (এটিপিএস)। চালক ঘুমিয়ে পড়লেও দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সে ব্যবস্থা রয়েছে এটিপিএস ব্যবস্থায়। উন্নত বিশ্বে এ ব্যবস্থা আগে থেকেই চালু হয়েছে।
দেশের ট্রেনে এ অত্যাধুনিক যন্ত্র স্থাপন বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ট্রেনের সুরক্ষা সম্ভব বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। রেলওয়ের মহাপরিচালক শামসুজ্জামান বলেন, এটিপিএস ট্রেন সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তবে সমীক্ষার জন্য যেসব প্রস্তাবনা এসেছে তার কিছু সংযোজন-বিয়োজন করতে হবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, দেশে ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ৫ বছরে ৯৪৫টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৪১ জন নিহত এবং ৩৮৮ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২৯টি দুর্ঘটনাই ঘটে ২০১৯ সালে।
রেলের অপারেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৭৪ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে ট্রেনের লাইনচ্যুতির কারণে। ৭০২ বার লাইনচ্যুতির মধ্যে ৩৪৯টি ঘটেছে অতিরিক্ত গতি ও অসাবধানতার কারণে। তা ছাড়া ভুল অপারেশন তথা ভুল সিগন্যালের কারণেও এমনটি হয়ে থাকতে পারে।
রেলের ভাষায় একে বলে ওভারস্যুট বা ভায়োলেন্স। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থা চালুর জন্য সমীক্ষা প্রস্তাব হাতে নিয়েছে রেলওয়ে। এর মনুষ্য ভুলে সিগন্যাল অমান্য এবং গতি নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনা অমান্য করাসহ অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পরিবহণ সংস্থা রেলওয়ে বছরে ১২ কোটি ৯০ লাখের বেশি যাত্রী পরিবহণ করে। পুরনো অবকাঠামো, ট্র্যাক, ব্রিজ, রোলিংস্টক, সংকেত ব্যবস্থা ইত্যাদির সীমাবদ্ধতার কারণে নিরাপদ যাত্রা ব্যহত হচ্ছে।
তা ছাড়া অপারেশন বিভাগের জনবল সীমাবদ্ধতা, ইঞ্জিন-কোচের রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতিও দুর্ঘটনার কারণ। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, জনবলের ঘাটতি। স্টেশনমাস্টার, লোকোমাস্টার, পয়েন্টসম্যান ও সিগন্যাল মেইনটেনারদের অতিরিক্ত ডিউটি করতে হয়।
ফলে তাদের অসাবধানতা বা অবহেলার কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে, গতি অতিক্রম করে মুখোমুখি ট্রেন সংঘর্ষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সমস্যা সমাধানে ট্রেন পরিচালনার ত্রুটি চিহ্নিত করে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। কারিগরি ও অপারেশনাল বিষয়ে নজর দিতে হবে। তা ছাড়া স্টেশনের সিগন্যালিং সিস্টেম সিটিসি, সিবিআই, রিলে মেকানিক্যাল ও নন-ইন্টারলকড সিস্টেমে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি ট্রেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
সান নিউজ/এসএ