আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশিসহ ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীরা বসনিয়ার জঙ্গলে মানবেতর জীবন-যাপন করার মধ্যেই তাদের দুর্দশা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়েছে বছরের প্রথম তুষারপাত। এ অভিবাসন প্রত্যাশীদের দলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাংলাদেশিও রয়েছেন।
শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বার্তা সংস্থা এপি‘র বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যমটি জানায়, তুষারপাতের মধ্যেও বেশ কিছু অভিবাসন প্রত্যাশী সেই পলিথিনের অস্থায়ী ঘরগুলোতেই বাস করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই পলিথিনের তাবুর ওপর বরফ জমে তা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে, ভেঙেও পড়ছে।
কিছুদিন আগে ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে অভিবাসন প্রত্যাশীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদক প্রকাশিত হয়। তখনই শীতের হাত থেকে বাঁচতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা। বাইরের ঠান্ডা থেকে বাঁচতে পলিথিনের তৈরি অস্থায়ী ঘর তৈরি করেছেন দেশছাড়া এই মানুষগুলো। কিন্তু সেটির ভেতরেও সহজেই জমে যায় কুয়াশার ফোঁটা।
জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা লাকড়ি দিয়েই রান্না ও শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছেন অনেকে। কিন্তু তাদের খাবারসহ অন্যান্য রসদও ফুরিয়ে আসছে দ্রুতই। আটকে পড়া অভিবাসন প্রত্যাশীরা উলের তৈরি টুপি, গরম পোশাক ও রেইনকোট পরে শীত মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। তবে প্রচণ্ড ঠান্ডার তুলনায় এসব ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ৩০ বছর বয়সী শাহীন এপিকে বলেন, ‘‘এখন প্রচণ্ড ঠান্ডা, গত রাতে আমরা খুবই সমস্যায় পড়েছিলাম ৷ আমাদের কোথাও ঘুমানোরও জায়গা নেই। “ তুষারপাতের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না অভিবাসন প্রত্যাশীরা। অনেকে নিজেদের একমাত্র গরম কাপড় ধুয়ে শুকানোর জন্য ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। বরফ পড়ে মুহূর্তেই জামা-কাপড়-জুতা এমনকি অনেকের রাতের একমাত্র সম্বল কম্বলও ভিজে যায়।
২২ বছরের আহমেদ জানান, তিনি কোথাও থাকার জায়গা পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি দিনদিন টিকে থাকার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ছে বলেও জানান।
এ দিকে ১৯৯০এর দশকে যুদ্ধের পর থেকে এখনো অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বসনিয়া। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির কারণে ইউরোপ মহাদেশের অন্যতম দরিদ্র দেশ এটি। তার ওপর হাজার হাজার অভিবাসীর চাপ দেশটিকে আরও বিপদে ফেলেছে। ডয়চে ভেলে জানায়, বসনিয়ার রাজনীতিবিদরাও একমত হতে না পারায় সংকট মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারছে না দেশটির সরকার।
অভিবাসন প্রত্যাশীদের কেউই বসনিয়ায় থাকতে চান না। তাদের লক্ষ্য সীমান্তের ওপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ ক্রোয়েশিয়া গিয়ে সেখান থেকে ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানির মতো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে যাওয়া।
কিন্তু ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যে অবৈধভাবে পাড়ি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন বেশির ভাগ অভিবাসন প্রত্যাশী। তাদের ক্রোয়েশিয়া বা স্লোভেনিয়া থেকে বসনিয়ায় ফেরত পাঠানোর সময় নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। খবর : ডয়েচে ভেলে।
সান নিউজ/এসএ