নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে বে-আইনীভাবে মধ্যরাতে তুলে নেয়া ও শারিরীক নির্যাতনের ঘটনায় জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার স্থলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে কুড়িগ্রামের নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৬ মার্চ সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশ জারি করা হয়।
এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কে এম আল-আমীনের স্বাক্ষর করা আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একই ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ শুক্রবার মধ্যরাতে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে তার বাসায় আধাবোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে দাবি করে তাকে তুলে নেন তারা। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের দণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর একদিন পর ১৫ মার্চ রবিবার দুপুরে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।
এ ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হলে রবিবার (১৫ মার্চ) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কুড়িগ্রামের ডিসিকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনা সংক্রান্ত সাজার সব নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকেও আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে এসব নথি দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ১৫ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ মার্চ সোমবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রিট আবেদনে টাস্কফোর্সের নামে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আরিফুল ইসলামকে অবৈধ সাজা ও আটক করা কেন সংবিধান পরিপন্থী হবে না, আরিফুল ইসলামকে ৫০ লাখ টাকা কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।
এছাড়াও রিটে কুড়িগ্রামের ডিসি, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তাদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য তলবের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আরিফের বিরুদ্ধে করা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলার নথি এবং টাস্কফোর্স পরিচালনার নথি তলবের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফ এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে ডিসি সুলতানা পারভীনের অনিয়ম নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করেন আরিফুল। এ সময় একাধিকবার তাকে ডিসি অফিসে ডেকে নিয়ে হুমকিও দেওয়া হয়।
সান নিউজ/ সালি