নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মতো এইচআইভি এইডস ভাইরাসে সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। বর্তমানে দেশে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। এদের মধ্যে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র আট হাজার ৩৩ জন। দেশে নতুনভাবে এইচআইভি এইডস শনাক্ত হয়েছে ৬৫৮ জনের শরীরে। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ পুরুষ ও নারী ২১ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী তিন শতাংশ। এ বছর ১২৪ জন রোহিঙ্গার শরীরে এইডসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল (এনএএসসি) প্রোগ্রামের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৯ জনের এইচআইভি এইডস শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে। যা ২০১৯ সালে ছিল প্রায় ২১ লাখ ৩৩ হাজারের মতো। ২০২০ সালে সর্বমোট ৬৫৮ জনের মাঝে এইচআইভি এইডস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১২৪ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নতুনভাবে সংক্রমিতদের মধ্যে পুরুষ ৩৪১ জন (৭৬ শতাংশ), নারী ১০৬ জন (২১ শতাংশ) ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১৩ জন (তিন শতাংশ)। এছাড়াও ১২৪ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪০ জন পুরুষ ও ৮০ জন নারী।
এনএএসসি প্রোগ্রামের তথ্য দেখা গেছে, নতুন যাদের শরীরে এইডস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ৩২ শতাংশ সাধারণ জনগণ। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে আসা ১৫ শতাংশের মাঝে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশে চলতি বছর এইডস আক্রান্তদের ১৪১ জন মারা গেছে। নতুনভাবে শনাক্তকৃতদের মাঝে ৫৭ শতাংশ তাদের শরীরের সংক্রমণের বিষয়ে জানে। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় এসেছে। যারা চিকিৎসার আওতায় এসেছে তাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশের ভাইরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়েছে।
‘৯০-৯০-৯০ লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জনের ক্ষেত্রে চলতি বছরের পরিসংখ্যান বিগত বছরগুলোর তুলনায় ভালো। ২০১৮ সালে দেশে ৫০ শতাংশ ও ২০১৯ সালে ৫২ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০২০ সালে ৫৭ শতাংশের এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত করা গেছে। ২০১৮ সালে ৬০ শতাংশ ও ২০১৯ সালে ৬৫ শতাংশ এইচআইভি এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার আওতায় আনা হলেও চলতি বছর ৭৬ শতাংশ আক্রান্তকে চিকিৎসার আওতায় আনা গেছে। ২০১৯ সালের ৮৫ শতাংশের মাঝে ভাইরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল। দেশে বর্তমানে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। তবে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র আট হাজার ৩৩ জন। দেশে এ রোগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৩৮৩ জন।
নতুন আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২৫ থেকে ৪৯ বছররের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৪ দশমিক ২০ শতাংশ, ১৯ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে দুই দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। ছয় থেকে নয় বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং শূন্য থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এক দশমিক ৮৮ শতাংশ।
দেশে চলতি বছরে শনাক্ত হওয়া ৬৫৮ জন পজিটিভ রোগীর মধ্যে বিবাহিতরাই সবচেয়ে বেশি। এদের সংখ্যা ৭০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অবিবাহিতদের সংখ্যা ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়াদের মধ্যে সংক্রমণের হার বর্তমানে ২ দশমিক ২৬ শতাংশ। যা আগে ২৫ শতাংশের উপরে ছিল।
বাংলাদেশে চলতি বছর এইচআইভি পজিটিভ ৩৯ জন গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব করেছেন। নবজাতকদের ৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা এইচআইভি এইডস ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত দেশে মোট ১৯১ জন এইচআইভি এইডস আক্রান্ত গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব করেছেন। এছাড়াও পিএমটিসিটি প্রোগ্রামের আওতায় ৮১ হাজার ২৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিবি-লেপ্রসি ও এইডস/এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে সারাদেশে ২৩ জেলার ২৮টি এইচটি সেন্টার আছে। জিন এক্সপার্ট মেশিন এইচআইভি ভাইরাস শনাক্তে কাজ করা হচ্ছে। মেশিনটি ইতোমধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তাই দ্রুত সময়ে বাকিদের শনাক্তের আওতায় আনা সম্ভব হবে। প্রতিদিনই আমাদের সফলতার পালক যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অর্জন। এক্ষেত্রে আমাদের বড় সফলতা হলো এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা।’
সান নিউজ/এসএম