নিজস্ব প্রতিবেদক : গোটা আমেরিকায় ও ইউরোপ জুড়ে চলছে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ। দ্বিতীয় ঢেউ যাতে বাংলাদেশের সীমানায় আছড়ে পড়তে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্কতামূলক কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আকাশপথে আগত যাত্রীদের জন্য করোনার নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বরাবরই দেশের জনগণসহ সকল সংস্থাকে এ ব্যাপারে আগাম সতর্কতা জারি করেছে । তবে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এয়ারলাইনসে সনদ ছাড়াই যাত্রী দেশে আসছে।
এই অবস্থায় দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্বেগ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরও। সনদ ছাড়া যাতে বিমান সংস্থাগুলো যাত্রী পরিবহন না করে সে বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে করোনার সনদ বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হলেও এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি হয়নি। ফলে আগের নির্দেশনা মেনে বাংলাদেশিদের সনদ ছাড়াই পরিবহন করছে বিমান সংস্থাগুলো।
রবিবার ( ২৯ নভেম্বর) করোনামুক্তির সনদ না নিয়ে আসা যাত্রী বাড়ছে উল্লেখ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘করোনামুক্তির সনদ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করছি। যারা সনদ ছাড়া আসছে তাদের আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠাচ্ছি। ইতিমধ্যে কোয়ারেন্টিন সেন্টারের সিট পূর্ণ হয়ে গেছে। খালি না হলে কাউকে রাখা যাবে না।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হেলথ ডেস্ক সূত্র জানায়, শুধু নভেম্বর মাসেই ৪ হাজার ১০৭ জন যাত্রীকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। গত শনিবার ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন বিমান সংস্থায় আসা যেসব যাত্রীর করোনার সনদ ছিল না, তাদের আশকোনায় হজ ক্যাম্প ও দিয়াবাড়িতে স্থাপিত কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫৮১ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। করোনামুক্ত সনদ ছাড়া যাত্রীদের যাতে কোনও বিমান কর্তৃপক্ষ পরিবহন করতে পারবে না।
সে বিষয়ে বেবিচককে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী। ‘কোভিড-১৯ এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য অবহিতকরণ সভায়’ তিনি এ অভিযোগ করেন।
করোনা সনদ ছাড়া কেন যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে জানতে চাইলে টার্কিশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশের সেলস এন্ড ট্রাফিক এজেন্ট এজাজ কাদরি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিদেশি নাগরিকদের জন্য করোনামুক্তির সনদ বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশি কেউ সনদ নিয়ে না আসলে তাদের বহন করা যাবে না, এমন কোনও নির্দেশনা নেই।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান বলেন, ‘কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে আসতে বাধা নেই। যদি কেউ আসে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হবে। এখন পর্যন্ত এটাই নির্দেশনা। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও করণীয় নিয়ে গত ১২ অক্টোবর বেবিচক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, ‘বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আগমনকারী সব যাত্রীর করোনা নেগেটিভ সনদ যাচাই করতে হবে।
প্রয়োজন অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ২২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বেবিচকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে বলা হয়েছে।
সান নিউজ/এসএ