নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈদেশিক মিশনে ভিসা-পাসপোর্ট ইস্যু কার্যক্রম দেখতে যক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৯টি দেশে সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এসব দেশে বাংলাদেশের মিশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার কার্যক্রম আছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং বিমান চলাচল শুরু হলে এই সফর আয়োজন করা হতে পারে।
আর এসব দেশে যেতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কারণ, এ কাজ আরও গতিশীল ও কার্যকর করার উপায় বের করতে তারা সম্যক ধারণা পেতে চায়।
কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের টাকায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন আছে। এতে কমিটিতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার শঙ্কা থাকে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। সরকারও মন্ত্রণালয়ের টাকায় সংসদীয় কমিটি বারবার বিদেশ সফরের বিপক্ষে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সূত্র জানায়, গত ২৭ আগস্ট কমিটির বৈঠকে বিদেশ সফর আয়োজন করতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। জাতিসংঘ মিশন ও বৈদেশিক মিশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার কার্যক্রম আরও গতিশীল ও কার্যকর করার উপায় নির্ধারণের বিষয়ে সম্যক ধারণা পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সফরসূচি ঠিক করতে বলেছিল কমিটি।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল চালু হলে এই সফর আয়োজন করার সুপারিশ করা হয়েছিল। গত ২৯ অক্টোবর কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কিত অগ্রগতির তথ্য জানায়। বৈঠকে জানানো হয়, ১৫টি মিশনে পাসপোর্ট ও ভিসা উইংয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এসব মিশনে পাসপোর্ট ও ভিসা উইংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মচারীরা কাজ করছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং আন্তর্জাতিক বিমান চালু হলে এই মিশনগুলোয় পাসপোর্ট ও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়।
এ ছাড়া গত ২৭ আগস্টের বৈঠকে সেন্ট মার্টিনে সফর আয়োজনেরও সুপারিশ করা হয়েছিল। কমিটির সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করে সেন্ট মার্টিন অঞ্চলে কোস্টগার্ডের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য যে কোনও বৃহস্পতিবার পরিদর্শনের তারিখ নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি শামসুল হক বলেন, বিদেশ ভ্রমণ যদি প্রয়োজন হয়, মন্ত্রণালয় যদি মনে করে কোনও একটি বিষয়ে এটি প্রয়োজন, তাহলে সফর হতে পারে। এই সফরের আলোচনা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বৈঠকে তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এখন এ বিষয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। দেশের ভেতরে একটি পরিদর্শনের কথা ছিল, তিনি সেটাও স্থগিত রাখতে বলেছেন।
জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, মন্ত্রণালয় ভিত্তিক সংসদীয় কমিটির কাজ হলো কমিটির আওতাধীন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পর্যালোচনা, অনিয়ম ও গুরুতর অভিযোগ তদন্ত করা এবং সংসদ থেকে পাঠানো বিল বা যেকোনো বিষয় পরীক্ষা করা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের টাকায় বিদেশ সফর বা কোনও সুবিধা নেওয়া হলে কমিটির কাজে তার প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া এই ধরনের সফরের রাশ টানতে সরকারও একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। ২০১৬ সালে সে সময়ের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্পিকারকে লেখা এক চিঠিতে বলেছিলেন, মন্ত্রণালয়ের টাকায় সংসদীয় কমিটির বিদেশ সফরের কারণে সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।
সংসদ বিষয়ে গবেষনায় সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এই সফরের সুপারিশ মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। মন্ত্রণালয়ের টাকায় বিদেশ সফর করে তাদের জবাবদিহি করার নৈতিক ভিত্তি থাকে না।
যদি কোনও তদন্তের স্বার্থে বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে সফর হতো, তাহলে যুক্তি ছিল। পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়, পাসপোর্ট ইস্যুর কাজ দেখতে যাওয়ার কিছু নেই। আর এটি দেখতে ৯ টি দেশে যাওয়া হাস্যকর। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা প্রয়োজনে অবশ্যই বিদেশ সফর করতে পারেন। এ জন্য সংসদের বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা উচিত।
সান নিউজ/এসএ