নিজস্ব প্রতিবেদক:
গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে হঠাৎ করে ফুলে ফেঁপে ওঠা নব্য ধনীদের। সরকারের বিভিন্ন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এতে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মদের অনেকে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারী দল আওয়ামী লীগের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর নব্য ধনীদেরও চিহ্নিত করার কাজ চলছে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা নব্যধনীদের একটি তালিকা এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জমা দেওয়া তালিকায় উঠে আসা নব্য ধনীদের নাম এবং তাদের অঢেল অর্থ-সম্পদের পরিমান দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী ঐ তালিকার বাইরে এমন আরও অনেককে খুঁজে বের করতে এবং তারা কীভাবে হঠাৎ এতো ধন-সম্পদের মালিক হয়ে উঠলেন তার উৎস উদঘাটন করে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রসারিত এই তালিকার কাজ খুব শিগগিরই শেষ হবে বলে জানা গেছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য সান নিউজকে বলেন, সারাদেশের ৬৪টি জেলাকে ২২ টি সমন্বিত জেলার আওতায় এনে এর প্রত্যেকটিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে এই গোয়েন্দারা অবৈধ আয়ের মাধ্যমে নব্য ধনীদের চিহ্নিত করে তাদের নাম পাঠাবেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে। সেগুলো যাচাই বাছাই করে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
তাঁর দাবি, ২২ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ায় দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে গতি এসেছে অনেক বেশি। এতে করে যারা অবৈধ উপায়ে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন তাদের সবার মধ্যে এরই মধ্যে এক ধরণের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান প্রনব কুমার।
জানা গেছে, বেশ কয়েকজন সচিব, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার নাম রয়েছে আগের তালিকায়। দলের ভেতর অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে যারা অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের অনেকের নামও রয়েছে ঐ তালিকায়।
আওয়ামী লগের নীতি নির্ধাকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের মধ্যে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবেই নব্য ধনীদেরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তারা আরও জানান, আগামীতে এদের কেউ-ই আর দলের কোন পদ-পদবীতে আসতে পারবেন না।
প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই হুশিয়ার উচ্চারণ করে আসছেন যে, দুর্নীতিবাজদের কেউই রক্ষা পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও বিভিন্ন সময় বলে আসছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নির্দেশে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় নিজ দলে শুদ্ধি অভিযান। তারই অংশ হিসেবে শুরু হয় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। দলের সবশেষ সন্মেলনে স্থান হয়নি দলের অভিযুক্ত দুনীতিবাজদের। এরই মধ্যে সরকারের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা, প্রভাবশালী ঠিকাদার, ব্যবসায়ী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ প্রায় সাতশো জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজদের অনেকের বিদেশ যাত্রায় জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সাংসদ নূর-উন-নবী চৌধুরী শাওন, শামসুল হক চৌধুরী, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, সাধারন সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ তাদের মধ্যে অন্যতম।
গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ নেতা ঠিকাদার জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভুইয়া, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভুইয়া, কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি সফিকুল ইসলাম ফিরোজ, পিডাব্লিউডি’র বর্তমান অতিরিক্ত প্রকৌশলী আব্দুল হাই, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ, হাবিবুর রহমান বকুল। কয়েকদিন আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারন সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে। এ ঘটনায় দল থেকে পাপিয়াকে বহিস্কারের পর তার বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের সঙ্গে কারা কারা জড়িত, তার সন্ধানে নেমেছে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।