বিশ্বব্যাপী ঘরে বাইরে মহাআতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাস। তবে বাস্তবতা হল নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৯৪ শতাংশ রোগী।
বুধবার দুপুর পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ জনের মধ্যে হাসপাতালগুলোতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে ৭০ হাজার ৮৮২ জনের। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেনন ৬৬ হাজার ৫৮২ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪২ হাজার ৬২০ জন। তাদের ৮৮ শতাংশই আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে করোনা সনাক্ত হওয়া ৩ জনের অবস্থাও ভাল বলে জানিয়েছে সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর।
আর বিশ্বের ১১১টি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মৃত্যূ হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ জনের।
গত রবিবার বাংলাদেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর থেকে সারাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যে যার মতো করে ফেস মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে শুরু করে খাবার সামগ্রী কিনে মজুদ রাখতে দোকানগুলোতে হুমড়ী খেয়ে পড়েন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ সান নিউজকে বলেন, “মানুষের মাঝে এ ধরণের আতঙ্কের সৃষ্টি হওয়ার মতো কোন কারণই নেই। সবাই শুধু মৃত্যূর সংখ্যাটাই দেখছেন, চিকিৎসা শেষে সুস্থতার বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় আসছে না। সুস্থতার পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও এটা আগে থেকে নানা রোগে আক্রান্ত মানুষ ছাড়া অন্য কারোর ক্ষেত্রে ভয়াবহ কোন ঝুঁকি নেই। বিশ্ববিখ্যাত স্বাস্থ্য সাময়িকীগুলোর প্রতিবেদনই বলছে করোনাতে আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসা শেষে ৯৮ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।”
তিনি বলেন, “তবে এটা ঠিক যে ভাইরাসটি অনেক ভারী এবং খুব দ্রুত ছড়ায়। তাই আতঙ্কিত না হয়ে মানুষের সতর্কতাই বরং বেশি প্রয়োজন এই মুহুর্তে।
দেশের প্রখ্যাত এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আরও জানান যে, করোনা ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “সুস্থ মানুষের মাস্ক ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। মাস্ক ব্যবহার করবে শুধু ডাক্তার-নার্স আর আক্রান্তরা। যে কোনো সুস্থ মানুষের মাস্ক ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ একই মাস্ক বারবার ব্যবহারের তা নোংরা হয়ে উঠছে। সেটিতে রোগ-জীবাণু বাসা বাঁধছে। সেটিই আবার অসচেতনভাবে ব্যবহার করায় উল্টো যে কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তাছাড়া অস্বাস্থ্যকরভাবে তৈরি ময়লাযুক্ত মাস্ক ফুটপাতসহ অলিগলিতে বিক্রি হচ্ছে, যার ব্যবহারে অবশ্যই স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এতে হেপাটাইটিস-বি, টিবি, টাইফয়েড, আমাশয়সহ ২০ ধরনের সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আরো বলেন, মাস্ক ব্যবহার জরুরি নয়, এমনকি হ্যান্ড স্যানিটাইজার না হলেও চলবে। শুধু সাবান দিয়ে হাত ধুলে ভাইরাস মুক্ত হওয়া সম্ভব। তাই এত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে করোনাভাইরাসে চীনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যূ হয়েছে ইতালিতে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত ১০ হাজার ১৪৯ জনের মধ্যে মৃত্যূ হয়েছে ৬৩১ জনের।
চীনে আক্রান্ত হয়েছে ৮০ হাজার ৭৫৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৩৬ জনের।
ইতালি থেকে পুরো ইউরোপ এবং আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানে এ ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে আগেই পৌঁছেছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যে ভারতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাস প্রথম দেখা দেয়। পরে চীনের অন্যান্য প্রদেশ এবং বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।