নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়োগবিধি সংশোধন করে বেতন বৈষম্য নিরসণের দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন সারাদেশের স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা। দাবি পূরণে প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে তারা।
শুক্রবার ( ২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ হেলথ এসিসট্যান্ট এসোসিয়েশন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের আহ্বায়ক শেখ রবিউল আলম খোকন বলেন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারীদের এই কর্মবিরতির ফলে আগামী ৫ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইনসহ দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচে রুটিন টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকবে।
নিয়োগবিধি সংশোধনসহ ক্রমানুসারে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন গ্রেড ১৬তম থেকে যথাক্রমে ১১, ১২ ও ১৩তম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবি তোলা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে
শেখ রবিউল বলেন, টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সহকারীগণ বর্তমানে ১০টি মারাত্মক সংক্রামিত রোগের (শিশুদের যক্ষা, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হুপিংকাশি, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও হামে-রুবেলা) টিকা প্রদান করেন। আমাদের স্বাস্থ্য সহকারীরাই ২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারি ৯ মাস থেকে ১৫ বছর কম বয়সের ৫ কোটি ২০ লাখ শিশুকে ১ ডোজ হাম-রুবেলা টিকা সফলভাবে প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেন, “প্রজাতন্ত্রের পদোন্নতি বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী ৩ থেকে ৭ বছর পরপর পদোন্নতি পান। কিন্ত একজন স্বাস্থ্য সহকারী ২০ থেকে ২৫ বছরে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে পারে না। যদিও পদোন্নতি পান তাহলে স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে কমপক্ষে ৫থেকে ৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়।
অনেকে এমন সময় পদোন্নতি পান, যখন চাকরির বয়স বাকি থাকে মাত্র ৫থেকে ৬ মাস। তবে পদোন্নতি হলেও বেতন বাড়ে না এক পয়সাও। উপরন্তু বদলি করা হয় অন্য জেলা বা উপজেলায়। করোনাভাইরাস মহামারীতে স্বাস্থ্য সহকারীরে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার কথাও তুলে ধরেন রবিউল আলম।
তিনি বলেন, বিদেশ ফেরতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার বিষয়টি ফলোআপ করেছেন স্বাস্থ্য সহকারীরাই। এছাড়া জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের রোগী শনাক্ত করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো এবং সন্দেহজনক রোগীর নমুনা সংগ্রহে সহযোগিতাও করেছেন তারা।
কিন্তু তাদের একটি মাস্ক ছাড়া (নিজের অর্থে কেনা) আর কিছুই ছিল না। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের ৮ শতাধিক স্বাস্থ্য সহকারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে কয়েকজনের।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের এক মহাসমাবেশে বেতন বৈষম্য নিরসণের ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০১৮ সালে ২ জানুয়ারি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি কমিটিও গঠন করে দেন।
এছাড়া চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি আমরা হাম-রুবেলা ক্যাম্পইন বর্জন করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালক মহোদয় আমাদের দাবিসমূহ মেনে নিয়ে লিখিত সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষর করেন। তারপরও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিদর্শক সমিতির সভাপতি দিনেশ চন্দ্র মণ্ডল, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় মাঠ কর্মচারী এসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান পান্না, বাংলাদেশ হেলথ ইন্সপেক্টর সেক্টরাল এসোসিয়েশনের ক্রিড়া সম্পাদক মির আব্দুল কাদের, হেলথ এসিসট্যান্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা আবুল ওয়ারেশ পাশা পলাশ, কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব ওয়াসিউদ্দীন রানা, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান কাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক নেজাম উদ্দীন।
সান নিউজ/এসএ