নিজস্ব প্রতিবেদক : মাদক উদ্ধারে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াড সংযোজিত হতে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে (নারকোটিক্স)। ডগ স্কোয়াড সংযোজিত হলে মাদক নিয়ন্ত্রণে বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সক্ষমতা আরও বাড়বে। এমনটিই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও পাওয়া গেছে।
বর্তমানে দেশে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিসহ একাধিক সংস্থার কাছে ডগ স্কোয়াড রয়েছে। যা মূলত বিস্ফোরক শনাক্ত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সূত্র জানায়, গত বছর মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বৈঠকে সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে মাদক পাচার নিয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত সরকার প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন- বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে মাদক পাচারের একাধিক ঘটনা ধরা পড়েছে। এর ফলে দুবাই, কাতার, বাহরাইন ও আরব আমিরাতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সম্পর্কে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
এতে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বৈঠকে বিমান বন্দর কেন্দ্রিক মাদক পাচারের ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেন। রাষ্ট্রদূতদের কেউ কেউ বিমান বন্দরগুলোতে আরও বেশি নজরদারির সুপারিশ করেন।
বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত উন্নত দেশগুলোতে ডগ স্কোয়াড দিয়ে মাদক উদ্ধার এবং তল্লাশি কার্যক্রমের কথাও উল্লেখ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে মাদক পাচার রোধে কার্যকর এবং শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ডগ স্কোয়াড সংযোজনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। বর্তমানে এ সংক্রান্ত অবকাঠামো, জনবল ও প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক বিষয় চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। অধিদফতরে ডগ স্কোয়াড সংযোজিত হলে আমাদের মাদক উদ্ধার কার্যক্রম আরও গতিশীলতা পাবে।’
সূত্র জানায়, ১৯ জানুয়ারি বিমানবন্দরে মাদক পাচার বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত চিঠির সূত্র ধরে ৬ ফেব্রুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে চিঠি পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। এতে মাদক উদ্ধার এবং তল্লাশির জন্য একটি ডগ স্কোয়াড গঠনের প্রস্তাবনা পাঠাতে বলা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত মহা পরিচালককে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। কমিটি বিভিন্ন পুলিশ র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মত বিনিময়ের পর ১২টি উন্নত জাতের প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে একটি স্কোয়াড গঠনের প্রস্তাব দেয়।
একই সঙ্গে অধিদফতর থেকে কুকুর পরিচালনার জন্য ৩৬ জনের একটি জনবল কাঠামো, যানবাহন ও প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ের একটি খসড়া প্রস্তাবও পাঠানো হয়। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিষয়ে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নারকোটিক্সের প্রস্তাবে নেদারল্যান্ডস, জার্মানি অথবা ইংল্যান্ড থেকে উন্নত জাতের কুকুর সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া র্যাব ও পুলিশের মতো যেসব সংস্থার কাছে ইতোমধ্যে ডগ স্কোয়াড রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যাতে করে অধিদফতরে নিজস্ব ডগ স্কোয়াড সংযোজিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মাদক উদ্ধারে তাদের ডগ স্কোয়াড ব্যবহার করা যায়।
এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) ডিআইজি কুসুম দেওয়ান বলেন, মাসখানেক আগেই হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাঁচামালসহ ইয়াবার বৃহৎ দুটি চালান জব্দ করা হয়। এ সময় আমরা দেখেছি শুধু স্ক্যানার দিয়ে মাদকের চালান আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। ডগ স্কোয়াড থাকলে বিমানবন্দরে মাদক উদ্ধার কার্যক্রম আরও বড় আকারে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক ডগ স্কোয়াড থাকলে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো পার্সেলের ওপর কার্যকরভাবে নজরদারি করা সম্ভব হবে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি ভারতেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নিজস্ব ডগ স্কোয়াড রয়েছে।
সান নিউজ/এসএ