নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর গ্রিন স্কয়ারে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দখলে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন (পাউবো) সরকারি জমি উদ্ধারের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থাটি । পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানা উল্লেখ করে সাইনবোর্ড লাগানো এবং মামলা করার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করার বিষয়টি গুছিয়ে এনেছে তারা।
বর্তমানে দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, গ্রিন স্কয়ারের বাড়িটি সরকারের এবং এটির মালিকানা পাউবোর। পাউবোর চোখে ধুলা দিয়ে বাড়িটি অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে। বাড়িটি উদ্ধারের জন্য যা যা করা দরকার, পাউবো সব করবে।
পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া ৫ নম্বর গ্রিন স্কয়ারের ১২ কাঠারও বেশি জমিতে ২তলা একটি বাড়ি ছিল। দখলের পর সেটি ভেঙ্গে ১০তলা বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করে হাজী সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা গ্রুপের করপোরেট অফিস তৈরী করা হয়।
সরকারি নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১২ দশমিক ১২ কাঠা জমির ওপর ২ তলা বাড়িটির দখল ও মালিকানা ছিল পাউবোর। পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া বাড়িটি ১৯৮৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করে তৎকালীন পূর্ত মন্ত্রণালয়। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে বাড়িটি ব্যবহার ও মালিকানা-সংক্রান্ত বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় পাউবোকে।
এটি বর্তমানে 'ক' তালিকাভুক্ত সম্পত্তি। যেসব পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকারি মালিকানাধীন, সেগুলো 'ক' তালিকাভুক্ত।
পাউবোর ফাইলে গ্রিন স্কয়ারের ওই বাড়ি-সংক্রান্ত গেজেটসহ নানা ধরনের নথিপত্র রয়েছে। ওইসব নথি অনুযায়ী বাড়িটির প্রকৃত মালিক পাউবো। তৎকালীন পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকেই তাদের বাড়িটির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শাখা-১০-এ সেই বরাদ্দপত্রটি সংরক্ষিত আছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, পাউবো বরাদ্দপত্রটি সংগ্রহ করতে শিগগিই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাবে। গণপূর্ত বিভাগের ধানমন্ডি উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়েও চিঠি দেওয়া হবে। বাড়িটির অতীত ইতিহাস সম্পর্কে নথিপত্র সংগ্রহ করতে গণপূর্ত বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণ শাখায়ও চিঠি পাঠানো হবে।
পাউবোর দায়িত্বশীল কয়েক কর্মকর্তা জানান, বরাদ্দপত্রসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথি সংগ্রহ করে বাড়িটির পাউবোর মালিকানা-সংক্রান্ত সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে বাড়িটি উদ্ধারে হাজী সেলিমকে প্রধান আসামি করে আদালতে মামলা করা হবে।
এসব ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পাউবো কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ও যানবাহন পরিদপ্তরের পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, ৫ নম্বর গ্রিন স্কয়ারের বাড়িটি গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ওয়াপদার (বর্তমানে পাউবো) উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান এলডিএল ভাড়া নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর বাড়িটি পরিত্যক্ত ঘোষণার মাধ্যমে সরকারি মালিকানায় আনা হয়।
পরে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বাড়িটি ডাক বাংলো বা রেস্ট হাউস হিসেবে ব্যবহারের জন্য ওয়াপদাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর বাড়িটিতে ওয়াপদার একজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও ৬ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সপরিবারে বসবাস করতেন। পাউবো বাড়িটি রেস্ট হাউস হিসেবে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করেছে।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালের এসএ জরিপ অনুযায়ী ওই জমির মালিক অবাঙালি সৈয়দ কাশেম আলী। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি দেশত্যাগ করেন। ১৯৮৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পূর্ত মন্ত্রণালয় এসআরও জারি করে জমিটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করে।
সান নিউজ/এসএ