নিজস্ব প্রতিবেদক:
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বাধুনিক ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত ১২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয়। সেদিন এর প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদিত ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রধমবারের মতো জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে পরীক্ষামূলকভাবে সংযুক্ত করা হয়।
বিদ্যুৎ খাত ও দেশের মেগাপ্রকল্পগুলোর মধ্যে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আপাতত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের গ্রাহকদের চাহিদা মেটানো হবে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হুসাইন জানান, পায়রা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে দেশের তেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো একে একে বন্ধ করে দেয়া হবে। কারণ কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে সক্ষমতা অর্জনের পথে চলার পর বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আর কোন যৌক্তিকতা থাকে না।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মেগাপ্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করবেন বলে আশা করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলতি মার্চ মাসেই প্রধানমন্ত্রী এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উদ্বোধন করে জাতিকে উপহার দেবেন বলেও তারা আশাবাদী।
তবে ঠিক কবে নাগাদ প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বেধন করবেন তা নির্ভর করছে তাঁর সময়ের ওপর। এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ নির্ধারিত না হলেও উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বহুল আলোচিত এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।
কেন্দ্রটির নির্বাহী প্রকৌশলী রেজওয়ান ইকবাল খান জানান, পরীক্ষমূলকভাবে শুরু করার পর বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখনও পর্যন্ত কোন জটিলতা দেখা যায়নি।আমরা আশা করছি সামনের মাস থেকে ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি বাণ্যিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে। আর ৬৬০ মেগাওয়াটের অন্য ইউনিটটি উৎপাদনে যাবে এ বছরেরই মে মাস থেকে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) যৌথভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। কেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এতে ঋণ সহায়তা করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এনডব্লিউপিজিসিএল এবং সিএমসি যৌথভাবে বিসিপিসিএল গঠন করে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, পৃথিবীতে এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ সাধারণত আট থেকে দশ বছরের আগে শেষ হওয়ার কোন নজির নেই। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই এর নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ এনডব্লিউপিজিসিএল এবং সিএমস’র মধ্যে কেন্দ্রটি নির্মেন চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে আমদানিকৃত কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে। কয়লার প্রথম চালানটি আসে গত বছর সেপ্টেম্বরে ইন্দোনেশিয়া থেকে। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের দ্বিতীয় কবয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলেও এটিই প্রথম আমদানিকৃত কয়লার ওপর নির্ভরশীল। বড় পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হল দেশের প্রথম কয়লাভিত্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যার পুরোটাই যোগান আসছে বড়পুকুরিয়ার কয়লা খনি থেকে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩৭ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সব মিলিয়ে ২২,৭৮৭ মেগাওয়াট।