নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রিটিশদের হাত ধরে ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়া চা বাগান দিয়ে চা শিল্পের যাত্রা। ১৮৫৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়। চা পানীয় হিসেবে জাতীয় জীবন ধারার সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
শুরুতে চা ছিল সমাজের সম্ভ্রান্ত শ্রেণির পানীয়। ব্রিটিশরা সর্বব্যাপী জনপ্রিয় করার চেষ্টার ফল চায়ের আজকের এই অবস্থা। তার জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে চা শ্রমিকদের। বংশপরম্পরায় ১৬৬ বছর ধরে তারা চা বাগানে বসবাস করছেন। চা শ্রমিকরা এখনো বসবাস করেন চা বাগানে।
একটি বাগান থেকে যাত্রা করে বাগানের সংখ্যা ১৬০টির অধিক। চায়ের বাগান বাড়ছে, উৎপাদন বাড়ছে, মুনাফা বাড়ছে, শুধু বাড়ে না শ্রমিকের মজুরি। মজুরি বোর্ডের মজুরিতেও দেয়া হয় না বাঁচার মতো মজুরি।
এছাড়া মজুরি বোর্ড বর্তমান সময়ে তিন পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত হলেও তা মূলত এক পক্ষ। মালিকপক্ষ, সরকারপক্ষ আর যিনি শ্রমিক প্রতিনিধি থাকেন, তিনিও থাকেন মালিকপক্ষের মনোনীত। ফলে তিন পক্ষের নামে মূলত তারা এক পক্ষ। এর ব্যতিক্রম চা শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও ঘটছে না। অথচ শ্রমিকদের শ্রম ও ঘামের ফসল হচ্ছে চায়ের এই সোনালি দিন।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ চা উৎপাদনে বিশ্বে ১২তম অবস্থানে ছিল। ২০১৯ সালে নবম স্থানে চলে আসে। ২০১৬ সালে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৭ লাখ কেজি চা অতিরিক্ত উৎপাদনসহ মোট সাড়ে ৮ কোটি কেজি চা উৎপাদন করে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০১৯ সালেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ কোটি ১০ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদনসহ মোট উৎপাদন হয় ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি।
২০১৯-২০ বর্ষে চা বিক্রির তথ্য থেকে জানা যায়, চায়ের গড় মূল্য ছিল কেজি প্রতি ১৯৬ টাকা, কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ মূল্য ২৯৭ দশমিক ২৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন মূল্য ১০১ টাকা। আর প্রতি কেজি চায়ের গড় উৎপাদন খরচ ১৬০-১৭০ টাকা। প্রতি কেজি চায়ের গড় মুনাফা ২৬-৩৬ টাকা। চা বোর্ড অকশনের গড় মূল্যের হিসাব অনুযায়ী প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার দাম ২৫ দশমিক ৭৫ টাকা।
এর বিপরীতে দৈনিক ১০২ টাকা মজুরি পাওয়ার জন্য নির্ধারিত ২৩ কেজি চায়ের পাতা তুলতে হবে। আর চা মৌসুমে বাড়তি আয়ের আশায় হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে শ্রমিকরা ৪০ থেকে ৫০ কেজি চা পাতা উত্তোলন করেন। কিন্তু ২৩ কেজি চা তুললে পান ১০২ টাকা, সেই হিসাবে প্রতি কেজি ৪ দশমিক ৪৩ টাকার কিছু বেশি হয়। কিন্তু ২৩ কেজির বাড়তি প্রতি কেজির জন্য শ্রমিকরা পান গড়ে ৩ দশমিক ৭০ টাকা। সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ থেকে ৫০০ শ্রমিক আছেন বাগানভেদে।
অতীতে চা শ্রমিকরা রেশন হিসেবে চাল, আটা, ডাল, চিনি-গুড়, লবণ, সাবান, কেরোসিন ইত্যাদি পেয়ে থাকলেও বর্তমানে একজন চা শ্রমিককে সপ্তাহে ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম চাল বা আটা দেয়া হয়। কিন্তু এই চাল বা আটা থাকে না খাবারযোগ্য আবার যখন যেটার দাম কম তখন সেটা দেয়া হয়। ১০ লাখ চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই সুবিধা পান মাত্র এক লাখ স্থায়ী চা শ্রমিক।
সরকার, মালিকপক্ষ ও চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী শ্রমিক নেতাদের কাছে জানতে চাই যখন মোটা চালের কেজি ৪০-৪৫ টাকা, আলু ৫০-৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ডাল ১০০-১১০ টাকা, বাজারে ৬০-৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না।
দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে ১ দশমিক ৩০ টাকা দরে সাপ্তাহিক ৩ দশমিক ২৭০ কেজি হিসেবে ১৩ দশমিক শূন্য ৮ কেজি রেশন, জোগালি সরদার ও প্রাথমিক চিকিৎসার কর্মীরা দৈনিক মজুরিপ্রাপ্ত শ্রমিক, ২৬ দিনের মজুরিকে দুই ভাগ করে কর্মদিবসের ওপর নির্ভর করে যে উৎসব ভাতা (বোনাস) প্রদান করা হয়।
তা মূলত উৎসাহ ভাতা, গ্র্যাচুইটি এবং কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ বাদ দেয়াসহ মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসেবে ১২০ দিনের পরিবর্তে ১১২ দিনের মজুরি প্রদান চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করে চুক্তি করা হলো।
সান নিউজ/এসএ