নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সবকিছু ঠিকঠাক মতো এগোলে আর মাত্র ২ বছরের মধ্যে ২০২১ সাল থেকেই ঢাকার উত্তরা থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত চলাচল শুরু হবে রাজধানীর মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসা মেট্রোরেল।
আওয়ামী লীগ সরকার যে মেগা প্রজেক্টগুলো হাতে নিয়েছে তার মধ্যে মেট্রোরেল অন্যতম। ২০১৮ সালের এক হিসেব অনুযায়ী উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র এর মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতিতে সাশ্রয় হবে ২০ হাজার কোটি টাকা, যা জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেড় শতাংশেরও বেশি এবং জাতীয় রাজস্ব আয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ।
নতুন বছরের শুরুতেই দৃশ্যমান হয়েছে মেট্রো রেল লাইন। উত্তরার দিয়াবাড়িতে ইংরেজী নতুন বছরের প্রথম দিনেই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মেট্রো রেললাইন বসানোর কাজ উদ্বোধন করেন। আর এই জানুয়ারী মাসেই এক কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হবে।
মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক সান নিউজকে জানান, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট বা উড়াল সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাকি উড়ালসড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হয়েছে।
সাথে সাথে রেলট্রাক বসানোর কাজও এগিয়ে যেতে থাকবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের মোট দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। বর্তমান প্রকল্পের মোট ৪০ শতাংশ এবং উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক।
তবে যাত্রীদের বাড়তি সুবিধার কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত লিংক করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার রুট যুক্ত হওয়ায় এমআরটি-৬ এর মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ২১ দশমিক ৬ কিলোমিটার। বর্তমানে বাড়তি অংশটির সার্ভে কাজ চলছে।
বিশ^ব্যাংকের ২০১৭ সালের প্রতিবেদন বলছে, কেবল যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হয়েছে ঢাকায় বসবাসরত মানুষের ৩৮ লক্ষ হাজার কর্মঘন্টা। বুয়েটের এ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ২০১৮ সালে করা এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার যানজটের কারণে প্রতিবছর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই যানজটের ৬০ শতাংশ কমানো গেলেও অর্থনীতিতে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার যোগ হওয়া সম্ভব।
অল ইনক্লুসিভ থিওরি প্রয়োগ করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের স্কুল অব কিবজনেসের অধ্যপক অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব আলী সান নিউজকে জানান, শুধুমাত্র ঢাকার এই মেট্রোরেলের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। কারণ যানজটের কারণে মানুষের অপচয় হওয়া কর্মঘন্টা, মানুষের স্বাস্থগত ঝুঁকি, মানসিক চাপ, পরিবেশের ক্ষতি কমে আসা, সড়কে অন্যান্য জেলার সাথে পণ্য পরিবহনে সুবিধা বেড়ে যাওয়াসহ অনেক কিছু বিবেচনায় নিলে মেট্রোরেল ঢাকার চিত্র বদলে দিয়ে কর্মপরিবেশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। প্রতিদিন রাজধানীর মানুষের কয়েক লাখ কর্মঘন্টা বাঁচাবে বর্তমান সরকারের এই এক মেগা প্রজেক্টই।
আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্টেশন হবে ১৬টি। স্টেশনগুলো হবে প্রায় দোতলা সমান উঁচু, দৈর্ঘ্য ১৮০ মিটার। স্টেশনে নীচতলায় হবে টিকেট ক্রয় এবং স্বয়ংক্রিয় প্রবেশদ্বার। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেও পাশাপাশি ইসলামী সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার ব্যবস্থা থাকবে স্টেশনগুলোতে।
প্রকল্পে ২৪টি ট্রেন চলাচল করবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি বগি নিয়ে। উভয় দিক থেকে ঘন্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। পরবর্তীতে প্রতিটি ট্রেনে যুক্ত হবে আরও ২টি করে বগি। মেট্রোরেল প্রকল্পে মোট ব্যয় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা বাংলাশেকে ঋণ দিয়েছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
সান নিউজ/ এমএপি