নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপনের মৃত্যুর ঘটনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ বুধবার (১১ নভেম্বর) এক বার্তায় এসব তথ্য জানিয়েছে।
ওই বার্তায় আরও বলা হয়েছে, আইজিপির নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে যেনো এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার কোনো পুনরাবৃত্তি না হয়।
এদিকে, আনিসুলকে হত্যার ঘটনায় হাসপাতালটির ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ১০ জন এখন পুলিশের রিমান্ডে রয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মাইন্ড এইড হাসপাতালটির কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। অবৈধভাবে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক রোগীর চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসি হারুন জানান, মৃত্যুর আগে হাসপাতালে বসেই সকালের নাস্তা করেছেন আনিসুল। এরপর তিনি ওয়াশরুমে যেতে চাইলে হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় এএসপি আনিসুলকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ২ তলায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে সেখানেই এক রুমে মারধর করা হয় আনিসুলকে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, আনিসুলকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার সময় তার বোন উম্মে সালমা সঙ্গে যেতে চাইলে হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় এবং অপর কর্মচারী রেদোয়ান সাব্বির তাকে বাধা দেয়। তারা ওপরে যাওয়ার কলাপসিবল গেটটিও আটকিয়ে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পর আনুমানিক ১২টার দিকে আরিফ মাহমুদ তার বোনকে ওপরে ডাকে। তখন পরিবারের সকল সদস্য ওপরে গিয়ে আনিসুলকে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। এরপর তাকে দ্রুত জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ১২টা ৫৮ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, এই ঘটনায় আদাবর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে আনিসুল করিম শিপনকে আসামিরা মারতে মারতে ২য় তলার একটি কক্ষে ঢুকায়। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধরে হাঁটু পিঠের ওপরে চেপে বসে। কয়েকজন ওড়না দিয়ে শিপনকে বাঁধে। কয়েকজন কনুই দিয়ে ঘাড়ের পিছনে ও মাথায় আঘাত করে। কয়েকজন কিল-ঘুষি মারে।
ডিসি বলেন, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে মারপিট করে আনিসুলকে হত্যা করেছে। এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সবাই পুলিশের কাছে হত্যার দায স্বীকার করছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় (৩৫), কো-অর্ডিনেটার রোদোয়ান সাব্বির (২৩), কিচেন শেফ মো. মাসুদ (৩৭), ফার্মাসিস্ট মো. তানভীর হোসেন (১৮), ওয়ার্ড বয়- জোবায়ের হোসেন (১৯), ওয়ার্ড বয় তানিফ মোল্লা (২০), সজীব চৌধুরী (২০), অসীম চন্দ্র পাল (২৪), মো. লিটন আহাম্মদ (১৮) ও মো. সাইফুল ইসলাম পলাশ (৩৫)।
পুলিশ জানায়, নিহত আনিসুল সর্বশেষ ট্রাফিকের সিনিয়র এসি (সহকারী কমিশনার) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় মানসিক সমস্যার কারণে হাসপাতালে যান তিনি। অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই মারা যান আনিসুল। পরে হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে তাকে মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
আনিসুল করিম শিপন ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সান নিউজ/এম