নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর আদাবরে অবস্থিত ‘মাইন্ড এইড’ আদতে কোনো হাসপাতাল নয়, এটি একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র। এমনটাই জানা গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত অভিযানে।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) আদাবরের মাইন্ড এইডে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দল। সেখানকার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তারা জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠানটি আদৌ কোনো হাসপাতাল নয়। বরং তারা সেখানে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে হাসপাতাল চালিয়ে আসছিল।
সোমবার (৯ নভেম্বর) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপনের মৃত্যুর ঘটনার পর আদাবরের এ প্রতিষ্ঠানটির বিষয়টি সামনে আসে। ওই প্রতিষ্ঠানে মানসিক সমস্যার কারণে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন তিনি। সকালে সেখানে নাস্তাও করেন। পরে টয়লেটে যেতে চাইলে তাকে প্রতিষ্ঠানটির অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে মারধর করা হয়। এর চার মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মারধরের দৃশ্যটি।
আনিসুলের পরিবারের অভিযোগ, ভর্তির পরপর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ওই হাসপাতাল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানো হয়। তাকে প্রতিষ্ঠানটির ছয়জন কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। এরপর নীল পোশাক পরা আরও দুজন কর্মচারী তার পা চেপে ধরেন। এ সময় মাথার দিকে থাকা দুজন কর্মচারী হাতের কনুই দিয়ে তাকে আঘাত করছিলেন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি নীল কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুলের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর আনিসুলকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই তার শরীর নিস্তেজ ছিল। একজন কর্মচারী তখন তার মুখে পানি ছিটান। তাতেও আনিসুল করিম নড়াচড়া করছিলেন না। তখন কর্মচারীরা কক্ষের মেঝে পরিষ্কার করেন। সাত মিনিট পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী কক্ষে প্রবেশ করেন। ১১ মিনিটের মাথায় কক্ষের দরজা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ১৩ মিনিটের মাথায় তার বুকে পাম্প করেন সাদা অ্যাপ্রোন পরা নারী। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের দাবি, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় তারা পুলিশ কর্মকর্তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন।
৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আনিসুল সর্বশেষ বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
সান নিউজ/এস