হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
থামছে না সড়ক দুর্ঘটনা। কিছুতেই ফেরানো যাচ্ছে সড়কে শৃঙ্খলা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃত্যূর মুখ। ভোর হতে না হতেই আজ শুক্রবার দুই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ১৪ জনের। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ৬ জনের প্রাণহানির পরই হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে আট যাত্রী নিহত হয়েছেন বলে শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে। এ দু্ই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। বছরের প্রথম ২ মাসে ৭২৯ টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৯৫ জন।
শুক্রবার সকালে নবীগঞ্জ উপজেলার তানভিরগাঁওয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ৮ যাত্রী নিহত হন বলে শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি এরশাদুল হক ভূঁইয়া নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সকাল সাড়ে সাতটায় মাইক্রোবাসটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই আটজন নিহত হন। এ ঘটনায় ৪ জন আহত হন। আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।তাৎক্ষণিকভাবে তাদের করো নাম পরিচয় জানা যায়নি।
অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে র ঘটনা ঘটে। এসময় মাইক্রোবাসের সিলিণ্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৬ জন নিহত হন বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভাটি কালিসীমা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন সোহান, সাগর, রিফাত, ইমন, হারুন ও শাকিল। এ ঘটনায় আহত হন শাহিন, বিজয়, আবীর ও জিসান। তাদের উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মাইনুল ইসলাম জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রামপুর এলাকায় সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার দিকে যাওয়া লিমন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসের ছয় যাত্রী নিহত হন।
এদিকে সাভারের উলাইন এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ট্রাকচাপায় শিল্প পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হন। এ ঘটনায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘাতক ট্রাকটিকে পুলিশ আটক করলেও এর চালক পালিয়ে গেছে।
নিহত আকাশ আহম্মেদ (২২) ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার আব্দুল মজিদের ছেলে।
সাভার হাইওয়ে পুলিশ জানায়, আজ সকালে মোটরসাইকেলে তিনি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উলাইল এলাকায় পেছন থেকে আসা দ্রুতগামী একটি ট্রাক তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নিয়মিত এক মাসিক প্রতিবেদনে জানানো হয়- চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে ৩৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে নিহত হয়েছেন মোট ৪৬৩ জন এবং আহতদের সংখ্যা ৯৪৮। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতের মধ্যে ৫২ জন শিশু এবং ৬৭ জন নারী রয়েছেন। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে মোট ৩৪০টি। দুর্ঘটনায় ৪৪৫ জন নিহত ও ৮৩৪ জন আহত হন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আহত-নিহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
৫ মার্চ বৃহস্পতিবার সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। দেশের সাতটি জাতীয় দৈনিক, চারটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, দুর্ঘটনায় ১৩৫ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। যা মোট নিহতের ২৯ শতাংশ। বাসযাত্রী-৩৯, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোর যাত্রী ৩৪, ট্রাক ও পিক-আপভ্যান যাত্রী ২৫, থ্রি-হুইলার যাত্রী ১১২ জন এবং অন্যান্য যানবাহনের ১১ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫১ জন। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৩২৯ জন, যা মোট নিহতের ৭১ দশমিক ০৫ শতাংশ।
এরমধ্যে আঞ্চলিক সড়কে ২৩৬টি (৬১ শতাংশ) এবং মহাসড়কে ১৫১টি (৪৫ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা।
তাছাড়া মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতির কথাও দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সান নিউজ/সালি