জাতীয়

গণপরিবহনে ৯৪ ভাগ নারীই যৌন হয়রানির শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণপরিবহনে যৌন হয়রানির খবর নতুন কিছু নয়। কেবল যৌন হয়রানিই নয়, ধর্ষণের পর হত্যার সংখ্যাও কম নয়। গণপরিবহনে চলাচলকারী ৯৪ ভাগ নারীই কোন না কোনভাবে হচ্ছেন যৌন হয়রানির শিকার।

চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ঢাকার ধামরাইয়ে কাওয়ালীপাড়া-বালিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের ভিতর এক নারী শ্রমিককে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ বছরেরই ২৪ জানুয়ারি আশুলিয়ার এক পোশাককর্মী কাজ শেষে জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাস উঠলে একা পেয়ে চালক ও হেলপার মিলে তাকে ধর্ষণের পর চলন্ত গাড়ি থেকে রাস্তায় ফেলে যায়। গত বছরের ৬ মে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা স্বর্ণলতা পরিবহনে তানিয়া নামে এক নার্সকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়ায় পরীক্ষা দিয়ে বাসে কর্মস্থল ময়মনসিংহে যাবার পথে জাকিয়া সুলতানা রূপা নামে এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা সারাদেশে ক্ষোভের জন্ম দেয়। এমন ঘটনার উদাহরণ রয়েছে ভুরিভুরি। কোন কোন ঘটনা বিচারের আওতায় এলেও নিরাপদে আনা যাচ্ছে না নারীকে।

দেশে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহন বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক।দেশে প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়া নারীর সংখ্যা ২৭ থেকে ৩০ ভাগ। তাদের অধিকাংশেরই যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম গণপরিবহন। গণপরিবহন মানেই নারীর জন্য যেন যুদ্ধাবস্থা। দৌড়ে চলন্ত বাসে ওঠা, ভিড়ের মধ্যে পুরুষ যাত্রীদের ঠেলে বাসে ওঠা, ঠাসাঠাসি করে পুরুষ যাত্রীদের গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়াতে বাধ্য হওয়া এবং যাত্রীদের ঠেলে বাস থেকে নামতে গিয়ে প্রতিনিয়ত নারীকে যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। অনেক পুরুষ যাত্রীর পাশাপাশি বাসচালক ও সহকারীরাও এ ধরনের জঘণ্য অপকর্মের অংশীদার। মহিলা যাত্রীদের বাসে উঠানো এবং নামানোর সময় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা হেল্পারতো মহিলা যাত্রীদের শরীরে সুযোগ বুঝে হাত দিতে না পারলে তার কর্তব্যই যেন পালন হয় না।

বেসরকারি সংগঠন অ্যাকশন এইডের একটি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাসে পুরুষ যাত্রীদের মাধ্যমে ৪২ শতাংশ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৩ শতাংশ নারী যাত্রী। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেব মতে, ২০১৯ সালে গণপরিবহনে ৫২টি ঘটনায় ৫৯ জন নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

গত বছর প্রকাশিত ব্র্যাকের ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারীই মৌখিক, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলোর অভাবকে নারীদের যৌন হয়রানির মূল কারণ বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গণপরিবহনে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রথমে ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষনের বিধান করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে, বড় বাসে নয়টি, ছোট বাসে ছয়টি এবং বিআরটিসি বাসে ১৪টি আসন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’র খসড়ায়ও বলা হয়েছিল, গণপরিবহনের সংরক্ষিত আসনে নারী, শিশু ও বয়োজেষ্ঠ ও প্রতিবন্ধীদের বসতে না দিয়ে অন্য কেউ ওই আসনে বসলে তিনি এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন তিনি। বিশেষ এই বিধানও মানা হয় না সবক্ষেত্রে।

বিআরটিএ-এর হিসাবে রাজধানীতে ২০১৮ সালের মাচ পর্যন্ত নিবন্ধিত বাসের সংখ্যা ২৮ হাজার ২২২। কিন্তু নারীদের জন্য বাস আছে মাত্র ১৫টি। সেটিও সরকারি পরিবহন সেবা বিআরটিসির। তাই প্রতি বাসে বা বাসস্টপ থেকে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে চলা প্রতি পাঁচটি বাসের অন্তত একটি বাস নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার পাশাপাশি অন্য সব বাসে নারীদের জন্য কমপক্ষে ২০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান করা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, এই ২০ শতাংশের অন্তত অর্ধেক আসন নারীদের জন্য সবসময় সংরক্ষিত রাখতে হবে, যেখানে পুরুষদের বসা একেবারেই নিষিদ্ধ থাকবে। সংরক্ষিত বাকি অর্ধেক আসনের কোনো আসন যদি খালি থাকে, তাহলেই শুধু পুরুষ যাত্রী ওইসব আসনে বসতে পারবেন। তবে কোনো নারী যাত্রী বাসে ওঠামাত্র তাকে সেখানে বসতে দিতে হবে। এই অভ্যাসটুকু পুরুষদের করতে হবে। এজন্য রেডিও, টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া, ট্রাফিক পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক সবাইকে কাজ করতে হবে।

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি কিন্তু সবক্ষেত্রেই বিঘ্নিত হচ্ছে, কারণ নৈতিকতার অধঃপতন। নারীদের পরিবহন সেক্টরে বেশি করে আনা গেলে গণপরিবহনে নারীর চলাফেরা সাহসী হবে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করার পাশাপাশি নারীর চলাচল নিরাপদ করার লক্ষ্যে গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পরিবহন মালিক সমিতিকে।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মাদাগাস্কারে নৌকাডুবে ২৪ জন নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাদাগাস্কারের উপকূলে দুইটি নৌকাডুবে কমপক...

গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায়...

সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি সপ্তাহের একেক দিন বন্ধ থাকে রাজধানীর...

লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: লেবাননের রাজধা...

প্রেস ক্লাব ছাড়লেন রিকশা চালকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবি আ...

একনেকে সভায় ৫ প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় অর্থনৈতিক...

মনে হয় কি যেন নাই

বিনোদন ডেস্ক: আন্দোলনের নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা। যে কারণে ভো...

সিরাজগঞ্জে শব্দ দূষণ রোধে সচেতনমূলক কর্মসূচি

মাহবুব চৌধুরী, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজনে...

সাত কলেজের পরীক্ষা স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্য...

ঢাকায় এলেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকায় এসেছেন আন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা