নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩,২৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৯৫ হাজার মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের পর কুয়েতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
৪ মার্চ মঙ্গলবার কুয়েতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায় বাংলাদেশসহ দশটি দেশের নাগরিকদের কুয়েতে প্রবেশ করতে হলে করোনাভাইরাস মুক্তির সনদ দেখাতে হবে। আগামী ৮ মার্চ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলেও জানায় তারা।
এ অবস্থায় নভেল করোনাভাইরাসের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করায় বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশি প্রাবাসীরা। তাদের অনেকে যাত্রার ভিসা-টিকেট সব ঠিক থাকলেও সময়মতো পাচ্ছেন না সনদ। কুয়েত দূতাবাস এবং আইইডিসিআরের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তাদের যাত্রা।
কেউ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা বোঝার একমাত্র উপায় রক্ত বা লালার পিসিআর (পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন) পরীক্ষা। আর বাংলাদেশে ওই পরীক্ষা হয় কেবলমাত্র রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট-আইইডিসিআরে।
এজন্য বুধবার আইইডিসিআরে গিয়ে দেখা গেছে কুয়েত প্রবাসীদের ভিড়। সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সনদের জন্য কুয়েত দূতাবাসে গেছেন তারা, তাদের সেখান থেকে একটি ফরম দিয়ে পিসিআর পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠায়। কিন্তু আইইডিসির থেকে তাদের জানানো হয়, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। কুয়েত দূতাবাসও তাদের কিছু জানায়নি।
দুই প্রতিষ্ঠানের এমন সমন্বয়হীনতার কারণে বিপাকে পড়েছেন কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ অবস্থায় দেশে আসা কয়েকশ মানুষ আইইডিসিআরের ফটকে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মুকাম্মেল নামে একজন জানান, গণমাধ্যমে এই নির্দেশনার কথা আমি জানতে পারি। আমি গতকাল দূতাবাসে গিয়েছিলাম খোঁজ নিতে। তারা তখন কিছু জানাতে পারেনি। আজ সকালে আবার গিয়ে দেখি আমার মত হাজারখানেক মানুষ। আমাদের একটা ফরম দিয়ে বললো আইইডিসিআরে পরীক্ষা করাতে হবে। কিন্তু এখানে বলছে এটা নাকি তাদের দায়িত্ব না। এখন কি করি কন তো?
মালেক নামে আরেকজন বলেন, ৮ তারিখের পর সার্টিফিকেট না পেলে কুয়েতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে। এদিকে টিকেটের সময় প্রায় শেষ, ক্যান্সেল হয়ে যাবে। নতুন করে সিঙ্গেল টিকেট কাটতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাগবে।
তাদের এ সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দুঃখজনক বিষয় হল, দূতাবাস এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগও করেনি। কোনো যোগাযোগ না করেই কুয়েত দূতাবাস আমাদের কাছে লোকজনকে পাঠাচ্ছে।
তিনি বলেন, কুয়েত প্রবাসী যাত্রীদের সনদ দেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, রোগতাত্ত্বিক নয়। আামাদের দায়িত্ব সার্ভিলেন্স করা এবং করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা। যার মধ্যে কোনো লক্ষণই নেই তার জন্য এই পরীক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই। ওটা শুধু দাপ্তরিক বিষয়।
ডা. ফ্লোরা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে জানান তিনি। কুয়েত দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।
৪ মার্চ বুধবার কুয়েতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, নির্দেশ অমান্য করলে সে নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কোনো নাগরিককে ফেরত পাঠাতে অর্থ গুনবে না কুয়েত সরকার। নিজ খরচে তাকে ফিরে যেতে হবে। পাশাপাশি নির্দেশ অমান্য করার কারণে বহনকারী বিমান সংস্থাকে জরিমানাও করা হবে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত কুয়েতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। সরকারি এক হিসাবে জানা যায় কুয়েতে প্রায় দুই লাখের মত বাংলাদেশি বসবাস করেন।
সান নিউজ/সালি