নিজস্ব প্রতিবেদক : ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থা মি. বেকার এর বিরুদ্ধে ৮০ কোটি ১৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির হিসাব উদঘাটন করেছে। এর মধ্যে ২৬৫ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করে ৩৪.৬ কোটি টাকার মূসক ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে প্রকৃত বিক্রি তথ্য গোপন করায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়।
রবিবার (৮ নভেম্বর) ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ভ্যাট অফিস থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির ২৯টি বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে থাকে। অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কোনও ধরনের হিসাব সংরক্ষণ ব্যতীত ব্যবসা পরিচালনা করছে। অনুসন্ধানে টঙ্গী এলাকায় প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা দুটো ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। এতে তাদের ব্যাংক লেনদেনপর্যালাচনায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি চিত্র উঠে আসে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থার উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার এবং ফেরদৌসী মাহবুব। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ অক্টোবর তার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত মি বেকার এর বিক্রয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন।
ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকস্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটিতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দুটো হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এমনকি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ অভিযানের আগের দিন যে সব পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে বের করেছে তার মূসক-৬.৫ চালান দেখাতে বলা হলেও তারা দেখাতে পারেননি। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত হওয়ায় মূসক-৬.৫ এর মাধ্যমে পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে আউটলেটে নেওয়ার বিধান থাকলেও তা পরিপালন করা হয় না। একইসঙ্গে, তারা ভোক্তাদের কাছে থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেয়নি।
অভিযানে গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাদের পুরনো কিছু অসংগঠিত তথ্যাদি পেয়েছে। সেখান থেকে এসব কাগজপত্র জব্দ করে। পরবর্তীতে জব্দকৃত এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ও দলিলাদির ভিত্তিতে জুলাই/২০১৪ হতে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সময়ে শুধুমাত্র বিক্রির ওপর ৩৪,৬০,৫৬,৩৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়।
এই ভ্যাটের ওপর মাস ভিত্তিক ২% হারে ২৫,৩৭,৮৭,০৯১ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য।এছাড়া সেপ্টেম্বর/২০১৯ হতে সেপ্টেম্বর/২০২০ পর্যন্ত সময়ে জব্দকৃত ক্রয়ের চালান পরীক্ষা করে কাঁচামাল ক্রয়ের ওপর অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১৭,৩৩,৯৬৮ টাকা পাওয়া যায়। এর ওপর মাস ভিত্তিক ২% হারে সুদ ৩৪,৬৭৯ টাকা প্রযোজ্য।
জুলাই/২০১৪ হতে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন শোরুম এর স্থান ও স্থাপনা ভাড়ারও অপরিশোধিত ভ্যাট ১,৫৬,৩৯,০৪০টাকা, যার ওপর মাস ভিত্তিক ২% হারে সুদ প্রযোজ্য ৯৮,৪৮,৮১৪ টাকা। জুলাই/২০১৪ হতে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন সেবা ক্রয়ের ওপর অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১০,২০,৭৫,১৮৩ টাকা, যার ওপর মাস ভিত্তিক ২% হারে সুদ ৭,২৪,৫৫,১৪১ টাকা প্রযোজ্য।
উক্ত অপরিশোধিত মূসক এর ওপর সুদ বাবদ মোট ৩৩,৬১,২৫,৭২৫ টাকা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট ৮০,১৬,৩০,২৫৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন এবং উৎসে ভ্যাট না দেওয়ায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রোববার ভ্যাট গোয়েন্দা সংস্থা মামলা দায়ের করেছে।
সান নিউজ/এসএ