নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ১৪ থেকে ১৫ হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ এখনও চীনে অবস্থান করছেন। ফলে প্রকল্পগুলোর কাজ যথাসময়ে শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তাই খোঁজা হচ্ছে বিকল্প ব্যবস্থা। এ অবস্থায় পদ্মাসেতুতে চীনের অভিজ্ঞ শ্রমিকের সংকট ঘোচাতে নিয়ে আসা হয়েছে রোবট। এমনটাই জানিয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকেল্পের কারিগরি বিভাগ।
বহুমুখী এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত চীনের অনেক কর্মকর্তা এবং কর্মী ছুটিতে থাকায় পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণ কাজের গতি এরই মধ্যে কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছে। সেতুর কাজ এগিয়ে নিতে চীন থেকে আনা হয়ে হয়েছে চারটি রোবোট। প্রকল্পের কারিগরী বিভাগের যুগ্ম পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান সান নিউজকে জানান, এই মুহুর্তে পদ্মাসেতুর কাজে জড়িত চীনের অভিজ্ঞ শ্রমিকদের ঘাটতির কারণে এক ধরণের সংকট তৈরি হয়েছে। কারণ নববর্ষে ওই সব শ্রমিকদের অনেকে ছুটিতে গিয়ে অনেকে করোনাভাইরাসের কারণে চীনে আটকা পড়েছে। তাদের ঘাটতি পূরণে বিকল্প হিসেবে প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
তিনি জানান, এরই মধ্যে চারটি রোবট আনা হয়েছে চীন থেকে। সেগুলো দেখতে মানুষের মতো না হলেও ওয়েল্ডিং-এ দক্ষ শ্রমিকদের কাজই করবে রোবটগুলো।
পদ্মাসেতু প্রকল্পের পচিালক লিউ জিয়ান হুয়া বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের কর্মীদের ছুটি বাড়ানোর কারণে যথাসময়ে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করাটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ এটি অনেক বড় একটি প্রকল্প।
চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জানিয়েছেন, চীনে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার আগে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারিভাবে প্রায় এক হাজার ৭০০ চীনা কর্মী কাজ করতো। এখন কাজ করছে এক হাজার ৩৬৫ জন। অর্থাৎ ৩৩৫ জন চীনে গিয়ে আর ফিরতে পারছে না। এর বাইরে বেসরকারি পর্যায়েও বেশ কিছু নাগরিক ছুটিতে গিয়ে আর ফিরতে পারেনি।
করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে চীনা কোম্পানিগুলোর বড় প্রকল্পগুলোতে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানাতে বুধবার পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কিছু কর্মকর্তা হুবেই প্রদেশে আটকা পড়েছেন। চীনের কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে না। তবে দুই দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই প্রভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে এরইমধ্যে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে নিশ্চিতে পদ্ম সেতু ও রেল সংযোগ প্রকল্পগুলোতে কর্মকর্তাদের শারীরিক অবস্থার প্রতিদিনের রিপোর্টিং সিস্টেম খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে প্রকল্প অফিসগুলো প্রতিদিন দুইবার পরিষ্কার করা হয়। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই সেতু নির্মান হলে তা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে আরও ১ দশমিক ২ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে ৮৫.৬৫ শতাংশ। ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩৯টির কাজ শেষ হয়েছে। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে বসানো হয়েছে ২৫টি স্প্যান।
আর পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক প্রজেক্ট (পিবিআরএলপি)’এর ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত, ভূতাত্ত্বিবক জরিপ ও অ্যালাইনমেন্টের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ৮৯.৫ শতাংশ এনবাঙ্কমেন্ট (বাঁধ) ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। ৯২.৮৫ শতাংশ টেস্ট পাইল ডিজাইন শেষ হয়েছে। ৩৭.৩ শতাংশ ওয়ার্কিং পাইল ডিজাইন, ৬৩.৬ শতাংশ কালভার্টের ডিজাইন, ২৫.২ শতাংশ বাঁধ নির্মাণের কাজ, ৬০.৫ শতাংশ টেস্ট পাইলের কাজ এবং ১৫.৭ শতাংশ ওয়ার্কিং পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১.৩ শতাংশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ আগামী বছরেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।