নিজস্ব প্রতিবেদক : ১০৮টি দেশের সাড়ে ১২ হাজারের বেশি বিদেশি অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছে। যাদের পাসপোর্ট, ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে অনেক আগেই। তাদের অনেকে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত। আবার অনেকে কর ফাঁকি দিয়ে উপার্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এসব অবৈধ বসবাসরত বিদেশিদের মধ্যে : ভারতের ৯,২৭১, দক্ষিণ কোরিয়ার ৫৪৮। চীনের ৪৮২, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪৫। যুক্তরাজ্যের ২০৮, নেপালের ২১০। কানাডার ১২৭, শ্রীলঙ্কার ১১০। ফিলিপাইনের ৭৮, জাপানের ৭২। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এর হিসাব অনুযায়ী, গত ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ১২ হাজার ৭৯০।
এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি ভারতের নাগরিক। তারপরই দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এদের কেউ ভ্রমণ ভিসায়, কেউ ব্যবসায়িক ভিসায়, কেউবা অন অ্যারাইভাল ভিসায় এ দেশে এসে অবৈধভাবে বসবাস করছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭ বছর ধরে আছেন মিসরের ৬ নাগরিক। আর সর্বনিম্ন অবৈধ অবস্থানকারীরা আছেন তিন বছর ধরে।
এখন বৈধ বিদেশিদের সংখ্যা প্রায় তিন–চতুর্থাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সরকারি হিসাবে এখন বৈধভাবে ১৪০টি দেশের ২০ হাজার ১৯৭ জন নাগরিক রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৯৭৪ জন হলেন ভারতের নাগরিক। এরপরই চীনের ২ হাজার ৯৩ জন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বিদেশি কর্মী কাজ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, আন্তর্জাতিক সংস্থা (এনজিও), হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অনেক বিদেশি কর্মরত। তাদের অনেকে কর ফাঁকি দিচ্ছেন। অনেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে কাজ করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। তারা প্রতিবছর অবৈধভাবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।
দেশে সাড়ে ১২ হাজারের বেশি বিদেশির অবৈধভাবে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এত বিপুলসংখ্যক বিদেশির বাংলাদেশে অবস্থানের কোনো তথ্য নেই।তিনি বলেন, ভিসার মেয়াদের বেশি অবস্থান করলে অর্থদণ্ডসহ জরিমানা হওয়ার কথা।
অথচ গত বছরের ৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা–সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকেও অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, অবৈধভাবে অবস্থানকারী ১১ হাজার বিদেশি নাগরিককে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এরপর এক বছর পার হয়েছে। এর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান বলেন, অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের রাখার মতো কোনো ডিটেনশন সেন্টার বা আটককেন্দ্র এখানে নেই। তাদের কারাগারে রাখতে হলে মামলা দিতে হয়। সেটা সময় ও অর্থসাপেক্ষ ব্যাপার। তাই একটি ডিটেনশন সেন্টার প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া চলছে।
সান নিউজ/এসএ/এস