নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার দুই দফায় আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও হিমাগার,পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা কেউই সরকারের নির্দেশনার প্রতি সামান্যতম সম্মান দেখাচ্ছে না। প্রথমে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা এবং পরবর্তীতে ৩৫ টাকা বেঁধে দেয়া হয়। তবে ভোক্তারা এখন পর্যন্ত ৪৫ এবং ৫০ টাকার নিচে এক কেজি আলুও কিনতে পারছেন না।
আলুর এই উর্ধ্বগতির সঙ্গে সঙ্গে বাজারে অন্যান্য সকল প্রকার সবজিও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য সপ্তাহের ব্যবধানে গাজরের দাম কিছুটা কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে বরবটির দাম। সব মিলিয়ে এখনও বেশিরভাগ সবজি অনেকটাই নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। বাজারে পেঁপে ছাড়া কোন সবজিই ৫০ টাকার নিচে মিলছে না।
শুক্রবার ( ৩০ অক্টোবর ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ খুচরা ব্যবসায়ী নিম্নমানের আলুর কেজি ৪৫ টাকা বিক্রি করছেন। স্থানভেদে কোনো কোনো ব্যবসায়ীকে ৫০ টাকা কেজিতেও আলু বিক্রি করতে দেখা গেছে। অথচ সরকার খুচরায় আলুর কেজি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। মহাখালী বাজারে ৫০ টাকা কেজি দামে আলু বিক্রি করা জাহিদ মিয়া বলেন, সরকার দাম বেঁধে দিলে কী হবে? আমরা তো পাইকারি বাজার থেকে কম দামে আলু কিনতে পারছি না। বেশি দামে আলু কিনে এনে কিভাবে কম দামে বিক্রি করবো?
তিনি বলেন, শ্যামবাজার থেকে দুই বস্তা আলু কিনেছি। প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৪১ টাকার ওপর। এই আলু থেকে বাছাই করা আলু ৫০ টাকা বিক্রি করেছি। একটু নিম্নমানের আলু ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। বাছাই করার সময় কিছু আলু ফেলে দিতে হয়েছে। গাড়ি ভাড়া, দোকান ভাড়া, কুলি খরচ যোগ করলে আলুতে লাভ থাকে না।
কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি ব্যবসায়ীরা আলুর কেজি ৪২ টাকা বিক্রি করেছেন। অথচ সরকার পাইকারি পর্যায়ে আলুর কেজি ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না হওয়ায় বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম শাহ বলেন, এখন খুব বেশি আলু মজুদ নেই। আবার নতুন আলু উঠতে দেরি হচ্ছে। এসব কারণে আলুর দাম বেশি। এ পরিস্থিতিতে সরকার আলুর দাম বেঁধে দিলেও কাজ হবে না। বাজারে আলু সরবরাহের তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি। নতুন আলু আসার আগ পর্যন্ত দাম কমবে বলে মনে হয় না।
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে গাজরের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। খুচরা বাজারে গাজরের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে গাজরের কেজি ১০০ টাকা ছিল। খুচরার পাশাপাশি পাইকারিতেও গাজরের দাম কমেছে। খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. সাগর মিয়া বলেন, গত সপ্তাহে এক কেজি গাজর ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ শুক্রবার ( ৩০ অক্টোবর) পাইকারিতে কম দামে কিনতে পারায় ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। গাজরের মতো আরও কয়েকটি সবজির দাম কমেছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী লিটন মজুমদার বলেন, গত শুক্রবার ১০ কেজি গাজর ৬০০-৬২০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ শুক্রবার ( ৩০ অক্টোবর) ৩৮০-৪০০ টাকা বিক্রি করেছি। সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। কিছুদিনের মধ্যে অন্যান্য সবজির দামও কমবে বলে মনে হচ্ছে। এদিকে আগের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো। গত কয়েক মাসের মতো এখনও ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো। এর সঙ্গে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
গত সপ্তাহের মতো শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। তবে বরবটির দাম বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি হয়েছে, তা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। বেগুন গত সপ্তাহের মতো ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে উস্তারও। এক কেজি উস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
এই সবজিগুলোর পাশাপাশি বাজারে অন্য সবজিগুলোও স্বস্তি দিচ্ছে না। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, গত সপ্তাহের মতো ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। তবে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ঝিঙা, কাঁকরোল, ধুন্দল, কচুর লতির। ঝিঙার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি।
লাউয়ের পিস গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এক হালি কাঁচা কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বাজারে আসা শীতের আগাম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। স্বস্তি মিলছে না কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজের দামেও। এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
কারওয়ান বাজার থেকে বাজার করা পিজি মোস্তফা বলেন, বাজারে গাজরের দাম কিছুটা কমেছে। তারপরও ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। বরবটি, বেগুনের কেজি ৮০ টাকা। ছোটো একটা ফুলকপির দাম ৩০ টাকা। সবজির এতো দাম হলে কী করে পারা যাবে। কয়েক মাস ধরে এমন চড়া দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। যা বেতন পাই তার প্রায় অর্ধেক টাকা বাজারে চলে যায়। বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে কয়েক মাস ধরে কোনো টাকা জমা করতে পারি না। উল্টো গত মাসে ধার করতে হয়েছে।
সবজির দাম নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন খিলগাঁও থেকে বাজার করা লাইল বেগম বলেন, বাজারের ভার আর টানতে পারছি না। আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক। এক-দুই সপ্তাহ না কয়েক মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। খাওয়া কমিয়ে দিয়েও খরচের লাগাম টানতে পারছি না।
আমদানি বাড়ায় কিছুটা কমলো কাঁচা মরিচের দাম
ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি বেড়েছে। কয়েক দিন আগে এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ট্রাক কাঁচা মরিচ আমদানি হলেও এখন আমদানি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ ট্রাক। এদিকে আমদানি বাড়ায় গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম কমেছে কেজিতে ৪০-৫০ টাকা। পূজার আগে হিলি স্থলবন্দরে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দামে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচের পাশাপাশি দেশীয় কাঁচা মরিচের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় খোলা বাজারে এই দাম কমে এসেছে। হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে দুদিনে ভারতীয় ৪৩ ট্রাকে ৪৩১ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে এ বন্দর দিয়ে।
সান নিউজ/এসএ