সান নিউজ ডেস্ক:
শোকাবহ ২৫ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কময় দিন। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ১১ বছর। ২০০৯ সালের ভয়ঙ্কর এই ঘটনার নৃশংসতায় পুরো দেশবাসি যেমন স্তম্ভিত হয়ে পড়ে, তেমনি তা মোকাবিলা করার কাজটাও ছিল সদ্য সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ।
তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআর-এর বিপথগামী কিছু সদস্য তাদের কিছু দাবি দাওয়া আদায়ের নামে সশস্ত্র বিদ্রোহ মেতে ওঠে পৈশাচিক উল্লাসে। হত্যা করে দেশের দক্ষ ও মেধাবী ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে ।
২০০৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি। সময় বুধবার সকাল ৯ টা ২৭ মিনিট। পিলখানার ভেতর চলছিল বিডিআরের বাৎসরিক দরবার। সে দরবার অনুষ্ঠানের শেষের দিকেই ঘটে কলঙ্কময় সে ঘটনা। মুখে কাপর বেঁধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বিডিআর জওয়ানরা ছড়িয়ে পড়ে পুরো পিলখানায়। তারা সেখানে সেনাকর্মকর্তাদের হত্যার পর তাদের পরিবারকেও জিম্মি করে ফেলে। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়তে থাকেন মেধাবী সেনা কর্মকর্তারা। নানান ঘটনা প্রবাহে রক্তের হোলি খেলায় রাত গড়িয়ে আরেকটি দিন আসে। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রেডিও-টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে বিদ্রোহের পথ থেকে সরে আসার জন্য বিডিআর সদস্যদের আহ্বান জানান তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিদ্রোহী জওয়ানরা অস্ত্র সমর্পণে সাড়া দেয়ার পর ২৭শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পিলখানার ভেতরে ঢুকতে পারে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাসহ অন্যদের মৃতদেহ। পাওয়া যায় গণকবর। অবেশেষে একটি রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে শমাপ্ত হয় শ্বাসরুদ্ধকর তিনটি দিনের। যা এখনওজাতির কাছে একটা কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে।
এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ১ জন সৈনিক, দুই জন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ জন বিডিআর সদস্য ও পাঁচ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।
সেদিনে সেই ঘটনার পর বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়। বিডিআরের নাম, পোষাক, লগো, সাংগঠনিক কাঠামো, পদোন্নতি ইত্যাদি ব্যাপারে পুনর্গঠন করা হয়। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
উচ্চ আদালতে পিলখানা হত্যা মামলাটির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে এ বছরের ৮ জানুয়ারি। অন্যদিকে, একই ঘটনায় চলমান বিস্ফোরক আইনের মামলাটির কার্যক্রম নিম্ন আদালতে এখনও শেষ হয়নি। এ মামলাটি বর্তমানে মহানগর দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি শেষ করা যাবে বলে রাষ্ট্রপক্ষ আশাবাদী।
ঘটনার পর লালবাগ থানায় ডিএডি তৌহিদুল আলমসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরে মামলাটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এছাড়াও বিস্ফোরক আইনে ৭৮৭ জনকে অভিযুক্ত করে আলাদা একটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এরপর সম্পূরক চার্জশিটে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় বিশেষ আদালত। আসামীপক্ষের আপিল শুনানী শেষে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে।