নিজস্ব প্রতিবেদক:
সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুবই অল্প সংখ্যক ভোট পড়েছে। উত্তর সিটিতে গড় ভোট পড়েছে ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং দক্ষিণে পড়েছে গড়ে ২৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। যা অনেকটা জনগণের মত প্রকাশের অনিহাই প্রকাশ করে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিলো ‘নিয়ন্ত্রিত’। এছাড়া এক অনলাইন জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৯৪ শতাংশের মতে সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে রাজধানীর ডিআরইউতে ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২০ বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও নির্বাচন মূল্যায়ন’ শীর্ষক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) ।
লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান।
বক্তব্য রাখেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রুবায়াতে ফেরদৌস।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনগুলো যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে স্বল্প ভোটার উপস্থিতির বেশকিছু কারণ তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর ভোটারদের আস্থা না থাকা (অর্থাৎ ভোট সুষ্ঠু হবে না এ ধরনের পূর্ব ধারণা), ইভিএম সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার ও আস্থা না থাকা, দলগুলোর পাল্টাপাল্টি হুমকির কারণে শঙ্কিত হয়ে ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ হওয়া, পাড়া-মহল্লা ও ভোটকেন্দ্র পাহারা এবং ভোটকেন্দ্রের বাইরে সরকারদলীয় কর্মী-সমর্থকদের জটলা ও মহড়া, আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে কিছু কিছু ভোটারের ভোট না দিয়েই ফিরে যাওয়া, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়ার বিষয়টি প্রচার হওয়া, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে ‘ভোটকেন্দ্রে না গেলেও তাদের প্রার্থী জয়ী হবেই’এমন ধারণা বদ্ধমূল থাকা, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মধ্যে শঙ্কা ও ‘তাদের প্রার্থী জিততে পারবে না’এমন ধারণা সৃষ্টি হওয়া ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ।
তাছাড়া যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকা এবং একসঙ্গে দু’দিন ছুটি থাকাও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার অন্যতম কারণ।
প্রতিবেদন তুলে ধরে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন কেমন হলো, তা জানতে নির্বাচনের পর সুজনের ফেসবুক পেজে আমরা একটি অনলাইন ভোটের (পোল) ব্যবস্থা করি। আমাদের প্রশ্ন ছিলো- ‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে আপনি মনে করেন কি না?’ এতে চার হাজার ৩০০ জন মানুষ অংশ নেয়। তাদের ৯৪ শতাংশ বলছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যদিও অনলাইন ভোট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়, এটি জনসাধারণের ধারণার অনেকটা ইঙ্গিত বহন করে।
সুজন বলছে, একটি প্রচার আছে যে, নির্বাচন ছিলো শান্তিপূর্ণ। আমরা মনে করি, এই শান্তি অশান্তির চেয়েও ভয়াবহ। কেননা, ভয়ের সংস্কৃতির কারণে কেউ যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস না পায়, তবে সেই অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়া দুষ্কর। ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার পরও যদি সেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়, তবে বুঝতে হবে প্রতিপক্ষ এখানে চরম দুর্বল।
সান নিউজ/সালি