নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার দুই দফা আলুর দাম নির্ধারণ করলেও তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা। নানা অযুহাতে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবেই চলছে আলুসহ সকল নিত্যপণ্যের দাম। চলতি মাসের শুরুতে হঠাৎ করেই ২০ টাকার আলু দাম বেড়ে এক লাফে ৫০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ শুরু হলে সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয়। গত ১৪ অক্টোবর প্রথম দফা আলুর দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সংরক্ষণাগার, পাইকারী ও খুচরা এই তিন পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করা হয়। কেজি প্রতি খুচরা পর্যায়ে ৩০, পাইকারিতে ২৫ ও সংরক্ষণাগার থেকে ২৩ টাকা।
কিন্তু বাজারে সরকারি সকল নির্দেশ উপেক্ষিত। আলুর দাম নির্ধারণ করে বাজার মনিটরিংয়ে মোবাইলকোর্ট পরিচালনার পরও নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না বাজার। পেঁয়াজের দাম আগের মতো থাকলেও এ বিষয়ে বাজার মনিটরিং এ থাকা সংশ্লিষ্ট সবাই যেন নিরব দর্শক। এ ব্যাপারে সব যেন চুপ হয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার বেড়েছে রসুনের দাম। সবজির দাম আগের মতোই লাগামহীন চালকের আসনে।
এসকল নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণের পর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে দেশের সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়েছে কিন্তু আলু ব্যবসায়ীরা এই সিদ্ধান্ত মোটেই গ্রাহ্য করেনি। আলু অতিরিক্ত দামে ৫০ টাকা বিক্রিই অব্যাহত রাখে। এই পরিস্থিতিতে গত ২১ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় আবারো আলুর দাম নির্ধারণ করে সরকার। ভোক্তা পর্যায়ে কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে খুচরামূল্য নির্ধারণ করা হয় কেজি ৩৫ টাকা। সেই ক্ষেত্রে পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা এবং সংরক্ষণাগার ২৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়।
আলুর দাম পুনর্নির্ধারণের পর তিন দিন অতিবাহিত হতে চলছে কিন্তু বাজারে সেই ৫০ টাকা কেজিতেই বিক্রি হচ্ছে আলু। কোথাও কোথাও কেজি ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে, তবে তার মান কিছুটা খারাপ। গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে বাজারে প্রতিটি দোকানে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে আলু। রিক্সাভ্যানে বা ভাসমান অবস্থায় দোকান সাজিয়ে ব্যবসা করছেন তারা একটু কমে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম আগের মতোই ৯০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যেই আছে। এখানে মানের ওপর নির্ভর করছে কম-বেশি। যেটা ভালো মানের তার দাম রাখা হচ্ছে ১১০ টাকা। আর নিম্ন মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। সরেজমিনে, বাজারে গিয়ে দেখা যায় রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। তবে খুচরা বিক্রেতারা বলেছেন, এই ১০ টাকা বাড়তি দামে তিন দিন ধরেই রসুন বিক্রি হচ্ছে। তিনদিন আগে বড় আকৃতির আমদানি করা রসুন বিক্রি হতো ৯০ টাকা কেজি, আর দেশীটার দাম ছিল ১০০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১০০ ও ১১০ টাকায়।
এদিকে, শাকসবজি সর্বত্র আগের মতো একইভাবে অতিরিক্ত দামে বিক্রি চলছে। কাঁচা মরিচের কেজি এখনো ২৫০-৩০০ টাকা। ৭০-৮০ টাকার নিচে ভালো কোনো সবজি মিলছে না বাজারে। বাজারে খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা জানান, এই যে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সবজির দাম আরো বাড়বে।
কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে আসা বেশ কয়েকজন ক্রেতার সাথে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। তারা প্রত্যেকেই মৌসুমী শাকসবজি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মাসুম নামের এক ক্রেতা বলেন, তারা কেবল শুনেই আসছেন বাজার মনিটরিং হচ্ছে। অথচ বাজারে তার ছিটেফোঁটাও প্রভাব নেই। তিনি বলেন, শুনেছেন আলুর কেজি সরকার ৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। এর আগে ৩০ টাকা নির্ধারণ করেছিল; কিন্তু বাজার থেকে তো ৫০ টাকায়ই আলু কিনতে হচ্ছে। বেশি রাখলে কার কাছে অভিযোগ জানাবেন। পুলিশের চোখের সামনেই তো বিক্রেতারা পণ্যের দাম বেশি রাখছে। তিনি আরও বলেন, ক্রেতারা জানেও না কার কাছে অভিযোগ জানাতে হবে। অথচ তারা বাজারে গিয়ে প্রতিটি জিনিসের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।