নিজস্ব প্রতিবেদক:
আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের নতুন এক উচ্চতায় প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিতে ৫২ তলা ভবন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে গড়ে ৭১ তলা ভবন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজের প্রতি কতজ্ঞতা স্মরণে ১১১ তলা ভবনের সমন্বয়ে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ার।
বিশ্বের সেরা কয়েকটি স্থাপত্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠতে যাওয়া চোঁখ ধাঁধানো এই টাওয়ার দেশের অর্থনীতি ও নির্মাণ শিল্পে বড় ভূমিকা রাখবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী পূর্বাচল শহরে ৯৬ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে তিন আইকনিক ভবন ছাড়াও গড়ে উঠবে ৪০ তলার আরো ৪৯টি ভবন। প্রথম দুই বছরেই ক্রয় করা হবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার নির্মাণ সামগ্রী।
বিশ্বের সর্বাধুনিক সোলার গ্লাসে তৈরি এ ভবনগুলো হবে পরিবেশবান্ধব। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও বিভিন্ন ইউটিলিটির জন্য করা হবে কমন ডাক্ট ব্যবস্থা। চীনের গ্রেট ওয়ালের আদলে তৈরি হবে ভবনগুলোর সীমানা প্রাচীর, যেখানে থাকবে ওয়াক ওয়ে। আর অভ্যন্তরীন যাতায়াতের জন্য পরিবেশ বান্ধব ইলেকট্রনিক বাস এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াক ওয়েও থাকবে এখানে।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান সিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড ও জাপানের কিজমা করপোরেশন যৌথভাবে নির্মাণ করছে এটি। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিতে ৫২ তলা ভবনটি ‘ল্যাঙ্গুয়েজ টাওয়ার’, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে ৭১ তলা বিশিষ্ট ভবন ‘লিবারেশন টাওয়ার’ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১১১ তলা বিশিষ্ট ভবনটি ’লিগ্যাসি টাওয়ার’ নামকরণে গড়ে উঠবে। লিগ্যাসি চাওয়ারের ৯৬তম তলায় খাকবে একটি মিউজিয়াম।
প্রকল্পের মাটি পরীক্ষা, যানবাহন ব্যবস্থপনাসহ বিভিন্ন সমীক্ষার প্রতিবেদন এরইমধ্যে রাজউকে জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের খসড়া মাস্টার প্লান ও ডিজাইনও নির্ধারিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্মার্ট ও নান্দনিক এই টাওয়ারের ডিজাইনের জন্য সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে রাজউক। বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ারের আর্কিটেক্ট হিসেবে পৃথিবী বিখ্যাত এবং কোরিয়ার শ্রেষ্ঠ আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠান হেরিম আর্কিটেক্ট কাজ করছে। আগামী বছর থেকে শুরু হতে যাওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০৩০ সালে।
পূর্বাচলের ১৯ নম্বর সেক্টরের ১১১ নম্বর রোডে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিকে (সিবিডি) ১১৪ একর জমি জুড়ে বঙ্গবন্ধু ট্রাই টাওয়ার প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত বাজেটের প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগের সংস্থান হয়ে গেছে এরই মধ্যে। এমনটাই জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের স্থান দখল করে ছিল ‘তাইপে ফিনান্সিয়াল সেন্টার’। তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে অবস্থিত সুউচ্চ এ ভবনটির বর্তমান নাম ‘তাইপে ১০১’। ১০১ তলা এ ভবনটির উচ্চতা ১৬ হাজার ৭১ ফুট বা ৫০৯ মিটার।
এই ‘তাইপে ১০১’ এর আদলে বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে ১১১ তলা বিশিষ্ট দেশের সবচেয়ে উঁচু ভবন লিগ্যাসি টাওয়ার, যেটির উচ্চতা হবে ৪৭৩মিটার ও ১৫৫২ ফুট।
২০১৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ২৫ ভবন নিয়ে করা ‘আর্ক ডেইলি’র প্রতিবেদনে দেখা যায় ৮৮৪ মিটারের উচ্চতা নিয়ে ১০৮ তলা বিশিষ্ট হংকংয়ের ইন্টারন্যাশনাল কমার্স সেন্টার পৃথিবীর ১১তম বড় বিল্ডিং। সেই হিসেবে লিগ্যাসি টাওয়ার উচ্চতার দিক থেকে হতে পারে বিশ্বের ১২তম উঁচু ভবন। যদিও সরকারের দাবি, ৪৭৩মিটার উচ্চতার লিগেসি টাওয়ারটি হবে বিশ্বের ৫ম উঁচুতম ভবন।