নিজস্ব প্রতিবেদক :
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নেতা নির্বাচনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ভোটদান। তৃণমূল থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত সকল নির্বাচনে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের যোগ্যনেতা নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মতামত ব্যক্ত করেন ভোটদানের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে সে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন ভোটাররা।
বর্তমানে নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত নির্বাচন কমিশন এবং ভোটদান প্রক্রিয়ার প্রতি ভোটারদের আস্থা নেই। এছাড়া সৎ ও যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনে না থাকার কারণেই বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, মানুষের নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্যই মানুষ ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না।
জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন নির্বাচনে শূন্য থাকছে ভোট কেন্দ্র। মানুষ দিন দিন ভোটের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে না যাওয়ার কারণ কি? এমন সব প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে পোনে ৫ লাখ ভোটার অধ্যাষিত এলাকায় মাত্র ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোট পড়ায় এমন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নওগাঁ-৬ আসনে ৩ লাখ ৬ হাজার ৭২৫ ভোটার অধ্যাষিত এলাকায় ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ভোটের হারের দিক থেকে নওগাঁ-৬ আসনে কিছুটা সন্তোষজনক হলেও করোনাকালে ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত যে কোনো আসনের তুলনায় এর হার অনেক কম। করোনাকালে ব্যালটে অনুষ্ঠিত ভোটের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে বগুড়া-১ আসনে, ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি নির্বাচনের সময় সেখানে প্রবল বন্যাও ছিল।
নির্বাচন বিশ্লেষক ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবে একথা মানুষ বিশ্বাস করে না। ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে পারবেনা এ সংশয় থেকেই মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছে না। ঢাকায় ভোট কম পড়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে, করোনাকালে ফিঙ্গার প্রিন্টে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে এমন তথ্য প্রচারে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করেছে।
ভোটার উপস্থিতি কম থাকার বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। সে বৈঠকেও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অভিযোগ করা হয়, স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে ঢাকা-১০ আসনে ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও দায়ী করা হয়। অপরদিকে, নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জালভোটসহ কারচুপির বেশি সুযোগ থাকার কারণে ব্যালটে বেশি ভোট পড়েছে। সেই তুলনায় ইভিএমে এই সুযোগ কম থাকায় ভোট কম হয়েছে।
দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই আসনে ভোট সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ২৭৫। ভোট পড়ে মাত্র ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ১৫ হাজার ৯৯৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম ধানের শীষ প্রতীকে পান ৮১৭ ভোট এবং জাতীয় প্রার্থীর হাজী মো. শাহজাহান ৯৭ ভোট পান।
করোনা সংক্রমণের পূর্বে এ বছরের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইভিএমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮৫ ভোটের মধ্যে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়ে। এমনকি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারে কম।
সান নিউজ/এসকে