নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ গ্যাস আইন-২০১০ গঠনের মাত্র ১০ বছরের মধ্যে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিজেদের করা আইনে ত্রুটি খুঁজে পেলো জ্বালানি বিভাগ। দেশে গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আইনটি সংশোধনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে যত্রতত্র এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও বাজারজাত বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি বিভাগ। এজন্য গত সেপ্টেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও চাওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০ এ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা যায় সে ক্ষেত্রে এমন কোনও বিধানই নেই। ফলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা সম্ভব না হওয়ায় আইনটি সংশোধন ও নতুন ধারা সংযোজনের উদ্যোগ নেয় জালানী বিভাগ।
জালানী বিভাগ থেকে জানা যায়, দেশে দিন দিন এলপিজি গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। বোতলজাত এই গ্যাসের ব্যবহারবিধি না জেনে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই হাতের নাগালে পাওয়ার কারণে এটি যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বদলে আরও বিপজ্জনক অবস্থায় এর ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু এলপিজি বিক্রির ক্ষেত্রে যেসব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত তার সামান্য কোথাও মানা হচ্ছে না।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এলপিজি গ্যাস বাতাসের চেয়ে ভারি। এজন্য এ দাহ পদার্থটি বাতাসের সঙ্গে উড়ে না গিয়ে আবদ্ধ জায়গায় জমা হয়। কোনও কারণে অসাবধানতাবশত আগুনের সংস্পর্শে এলেই অগ্নিকাণ্ডের ফলে মারাত্মক দূঘটনা ঘটে। কোথাও এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তাপের কারণে সিলিন্ডারের বাল্ব খুলে গিয়ে গ্যাস বেরিয়ে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে। এজন্য এলপিজি বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যবহার পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়, যা সাধারন ক্রেতা বা ব্যবহারকারী কেহই কোন নিয়ম-কানুন মেনে চলে না।
গত ১৩ অক্টোবর জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান স্বাক্ষরিত মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। পাইপলাইনে ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক গ্যাসের নতুন করে সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার কারণে এখন দেশের প্রধান জ্বালানি হয়ে উঠেছে এলপিজি। কিন্তু মাত্র ১০ বছর আগের করা আইনে এলপিজি বাজারজাত ও ব্যবহারকারীদের অনিয়ম ধরার বিধান সংযুক্ত না হওয়াকে বিস্ময়কর বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ১৩ অক্টোবর জ্বালানি বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় একজন যুগ্ম সচিব বলেন, বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০-এ এ ধরনের বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিধান না থাকাতে তাদের আইনগত জটিলতায় পড়তে হয়েছে। ফলে আপাতত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এজন্য গ্যাস আইন ২০১০ সংশোধন প্রয়োজন। পরে জ্বালানি সচিব গ্যাস আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশোধনের আদেশ দেন।
২০১৯ সালে ৮১টি এলপিজি দুর্ঘটনায় অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন। মূলত এরপরই নড়ে চড়ে বসে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এজন্য ব্যবহারবিধিসহ সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেয়।
সান নিউজ/এসকে