নিজস্ব প্রতিবেদক :
যুক্তরাজ্যের কীটনাশক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নোভালিউরন থেকে আমদানী করা ‘নোভালিউরন’ নামে মশক নিধন ওষুধ একবার ছিটালে তিন মাস পর্যন্ত সেখানে মশা জন্মাতে পারবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনর-(ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা।
ডিএনসিসি বলছে, এই ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। শনিবার (১৭ অক্টোবর) থেকে ডিএনসিসি এলাকার ৬৬০টি স্থানে এই ওষুধ ছিটানো শুরু হবে।
যুক্তরাজ্যের কীটনাশক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নোভালিউরনের তৈরি একটি ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর (আইজিআর)। যাহা মশার বংশ বিস্তার আটকে দেবে, লার্ভাকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে দেবে না। ট্যাবলেট আকারের ওষুধ পানিতে ব্যবহার করতে হয়। স্লো রিলিজ ফর্মুলেশনের এই ট্যাবলেট পানিতে রেখে দিলে ধীরে ধীরে ওষুধের কার্যকারিতা পানিতে ছড়িয়ে পড়ে এতে মশার লার্ভার বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপ নিতে পারে না।
বাংলাদেশের একটি বেসরকারি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ওষুধ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে ডিএনসিসির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারোয়ার জানিয়েছেন। তিনি সান নিউজকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের তত্ত্বাবধানে তিন মাস ধরে নোভালিউরনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। একই সময়ে ডিএনসিসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও ওষুধটির প্রয়োগ হয়েছে।
এই কীটনাশকের ফিল্ড ট্রায়াল কানাডা ও ইংল্যান্ডে হয়েছে। আমাদের মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটের বেইজমেন্টে নোভালিউরনের প্রয়োগ করেছি। সেখানে সব সময় পানি জমে থাকে। দেখেছি কোনো মশা জন্মাচ্ছে না। প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ওষুধটি যেভাবে কাজ করবে বলেছিল, তা আমাদের মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষায়ও দেখেছি। আমরা ৩০ জুলাই সেখানে ওষুধ দিয়েছিলাম। গত বৃহস্পতিবার আমরা সেখানে গিয়েছি। দেখেছি লার্ভা নেই।
ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি ট্যাবলেটের ওজন এক গ্রাম। ১০ লিটার পরিমাণ পানির মধ্যে দুটি ট্যাবলেট ছেড়ে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে ডিএনসিসি এলাকার বিভিন্ন জলাবদ্ধ ড্রেন, খাল ও লেকে এই ট্যাবলেট ছাড়া হবে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সান নিউজকে বলেন, “কীটতত্ত্ববিদরা ডিএনসিসির ৬৬০টি স্থানকে কিউলেক্স মশার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছে। এসব জায়গায় ওষুধটি দেওয়া হবে।”তিনি বলেন, ডিএনসিসির খালগুলো পরিষ্কার করার অন্যতম কারণ নোভালিউরন ছিটানো।
এখন আমরা যেটা করি সেটা মশার ওষুধ দিয়ে মারি। কিন্তু মশা জন্মাবে কেন? মশাটা যখন পিউপা আকারে থাকবে তখনই এটিকে বিকলাঙ্গ করে দেবে। এ কারণেই আমরা বাংলাদেশে প্রথম চতুর্থ প্রজন্মের মশার কীটনাশক ব্যবহার করছি। আর এডিস মশার জন্য আমরা একটা পরিকল্পনা প্রণয়ন করছি। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণেও আমরা কাজ করব। এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার। তিনি বলেন, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে ওষুধটি তিন মাস ধরে কাজ করবে। গবেষণাগারে সেটাই পরীক্ষা করে দেখেছেন তারা।
আমরা ল্যাবে দেখেছি যে, এটা কার্যকর থাকে কি না। আমাদের গবেষণাগারে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, এই ওষুধটা মশা মারতে কাজ করবে। তাহমিনা আক্তার বলেন, “এটার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কারণ এটা ইনসেক্টকে মারবে না। এছাড়া এটা যে কীটের ওপর প্রয়োগ করা হয় শুধু সেটার ওপরই কাজ করবে।”
তিনি বলেন, “পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় এটা অন্য কীটপতঙ্গ মারবে না। ফলে ইকোসিস্টেম নষ্ট করবে না।”কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, শীতকালে কিউলেক্স মশার উৎপাত বাড়ে। এই মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া হতে পারে। শীত আসলেই রাজধানীতে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়ে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, রাজধানীর অনেক এলাকায় দিনের বেলাও এই মশার উপদ্রব লক্ষ্য করা যায়।
সান নিউজ/এসকে