নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসেই দেশে অন্তত ৯৭৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আর ধর্ষেণের শিকার এসব নারীদের মধ্যে ৪৩ জনকেই ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।ধর্ষিতাদের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন অন্তত ১২ জন।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। 'নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয়' শীর্ষক এ বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. শাহনাজ হুদা।
উদ্বেগজনক হারে নারী এবং শিশুদের প্রতি এই সহিংসতা বেড়েই চলেছে। ড. শাহনাজ হুদা বলেন, বাংলাদেশে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। আইন ও শালিশ কেন্দ্রের (আসক) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি এবং ধষর্ণচেষ্টা করার ঘটনা ২০৪টি। ধর্ষণের পর ৪৩ নারীকে হত্যা করা হয় ও ১২ নারী আত্মহত্যা করেন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) দ্বারা পরিচালিত অন্য একটি জরিপে দেখা যায়, এপ্রিল মাসেই দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২৭ জেলায় ৪ হাজার ২৪৯ নারী এবং ৮৬ শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ১ হাজার ৬৭২ নারী ও ৪২৪ শিশু লকডাউনের সময় জীবনে প্রথমবারের মতো পারিবারিক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছে। জনগণের একটি বিশাল অংশ তাদের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রবেশের অধিকার পাচ্ছে না। অন্যদিকে অপরাধীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিচারহীনতা ও দুর্নীতির সংস্কৃতি চলমান থাকায় আইনের শাসনের যথাযথ চর্চায় বাধাগ্রস্ত হয়।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, করোনা মহামারির সঙ্গে এখন ধর্ষণ মহামারিও যুক্ত হয়েছে। এ মহামারি এখন সমাজের সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান। সরকার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বিচার হোক। বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রভাব ইত্যাদি কারণে যথাযথ বিচার হচ্ছে না। বিচারহীনতার এ সংস্কৃতি দূর করে অপরাধীকে যথাযথ বিচারের আওয়াতায় এনে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যধি। এটা সমাধান করতে হলে আমাদের অনেক বিষয় সমাধান করতে হবে। তবে এ মুহুর্তে যেটা সবচেয়ে জরুরি সেটা হলো- বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা। নির্যাতিতা নারী যাতে বিচার পান, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমেই এ অনলাইন বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।