নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিত্যপণ্যের বাজার লাগামছাড়া। বর্তমানে বাজারে শাকসবজি থেকে শুরু করে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আলু, মরিচ, ডিম ও সব ধরনের পণ্য কিনতে ভোক্তাদের নাভিস্বাস উঠে গেছে। সকল প্রকার পণ্যে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।
বাজারে সকল পণ্য প্রচুর সরবরাহ থাকলেও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ দ্বিগুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। ২০-২২ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকা। ৮০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্য কিনতে আসা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে ক্ষোভ বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে, ভোক্তা সাধারণ শুধু বাজারে এসেই ক্ষোভ প্রকাশ করে থেমে নেই। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা লেখনির মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভের বহি;প্রকাশ দেখাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, দেশে গরিবের খাবার মানে ভাতের সঙ্গে কাঁচামরিচ দিয়ে তৈরি আলুভর্তা। কিন্তু মনে হচ্ছে এই খাবার এখন বিলাসিতায় স্থান করে নিয়েছে। বর্তমানে এক কেজি মরিচ ২৫০-২৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে।
খুচরা বাজারে আলুর কেজিও ৫৫ টাকা। পাশাপাশি সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। বিশেষ করে মোটা চাল এখন প্রতি কেজি ৫০-৫২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে, এই খাবার এখন আর গরিবের বললে খুব বেশি ভুল হবে। এটা এখন ধনীদের খাবার। রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও নয়াবাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা।
এছাড়া গত বছর একই সময়ে এই আলু প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০-২২ টাকা। বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৫৬-৫৮ টাকা, ১৮ দিন আগে ছিল ৫৩-৫৪ টাকা। বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা, ছিল ৪৬-৪৭ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা, ছিল ৪০-৪২ টাকা।
পাশাপাশি রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন কোম্পানিভেদে সর্বোচ্চ ৫২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা সাত দিন আগে ছিল সর্বোচ্চ ৫১৫ টাকা। প্রতি লিটার পাম অয়েল (সুপার) বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৭০ টাকা। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা।
যা সাত দিন আগে ছিল ১৬০ টাকা। দেশি আদা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা। যা সাত দিন আগে ছিল ৮৫-৯০ টাকা। এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা। যা সাত দিন আগে ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা এক গৃহিণী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই দাম বাড়ার পেছনে কি কোনো যৌক্তিক কারণ আছে? যে যেভাবে পারছে ভোক্তার পকেট কাটছে। এসব বিষয়ে যারা বাজার তদারকি করবে সবাই নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। এ সুযোগে অসাধুরা একটি একটি করে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।
কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ সান নিউজকে বলেন, যে কোনো অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। সিন্ডিকেট করে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই প্রতি সপ্তাহে একটি একটি করে প্রায় সবগুলো পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে একসঙ্গে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় ভোক্তার ওপর বেশ চাপ পড়ছে।
যে কারণে ভোক্তারা পণ্য কিনতে এসে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। বাজার নিয়ন্ত্রনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এখনই যদি বাজার মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে জনমনে এর মারাত্মক বিরুপ প্রভাব পড়বে। তাই সরকার সংশ্লিষ্টদের উচিত কঠোরভাবে বাজার তদারকি করে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা।
এতে ভোক্তার একটু হলেও স্বস্তি মিলবে। জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল সান নিউজকে বলেন, বাজারে অধিদফতরের একাধিক টিম তদারকি করছে। পাশাপশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিমও কাজ করছে। নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। তদারকিকালে কোনো অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না।
সান নিউজ/এসকে