নিজস্ব প্রতিবেদক : তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিনোদন প্ল্যাটফর্মগুলোর অশ্লীল কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) সচিবালয়ে ভারতের নতুন হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাই স্বামীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সরকার ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন সংশোধন করেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হলো, তাহলে কি এটা বিএনপির পছন্দ হয়নি? এই প্রশ্নই তো দেখা দেয়। আইন সংশোধন বিএনপির পছন্দ হয়নি, এটাই তো তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যায়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন সংশোধন করেছে। বাংলাদেশে একসময় এসিড নিক্ষেপ বেড়ে গিয়েছিল। যখন কঠোর শাস্তি বিধান রেখে আইন হলো, তখন এসিড নিক্ষেপ কমে গেছে। এখন এসিড নিক্ষেপের ঘটনা প্রায় ঘটেই না। একইভাবে আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি রাখার প্রেক্ষিতে এ ধরনের (ধর্ষণ) অপরাধও অনেক কমে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু আইন সংশোধনের মধ্যেই আমাদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রাখব না। আমরা জানি বিচার যাতে দ্রুত হয় সেটির ওপরও সরকার গুরুত্ব আরোপ করছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং এন্টারটেইনমেন্ট (বিনোদন) প্ল্যাটফর্মগুলোতে যেভাবে আমাদের দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সেগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক এবং অনেক ক্ষেত্রে পর্নোগ্রাফির কাছাকাছি যেসব কনটেন্ট আপলোড করা হয়, সেগুলো এই ব্যাধি ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। সেগুলোর ব্যাপারেও আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে ফিল্ম নির্মিত হচ্ছে সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। সেটি যাতে মুজিববর্ষের মধ্যেই সমাপ্ত করা যায়, সেভাবেই শিডিউল করা হচ্ছে। মুজিববর্ষের মধ্যেই ফিল্ম করা ও পুরো কাজটি শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে। এছাড়া যৌথভাবে আরও একটি ছবি নির্মাণ করার কথা রয়েছে। সেটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি ডকুমেন্টারি মুভি করার। সেটি নিয়েও আমরা কাজ করছি। সেটিতে পরিচালক বাংলাদেশ থেকে হবে, কো-ডিরেক্টর হবে ইন্ডিয়া থেকে। সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দেখা যায় জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ত্রিপুরায় দেখা যায়, মেঘালয়ে দেখা যায়। সমস্যাটা হচ্ছে পশ্চিমবাংলায়। পশ্চিমবাংলায় আমাদের বেশিরভাগ চ্যানেল দেখা যায় না। দু-একটি চ্যানেল দেখা যায়। সেটি কীভাবে করা যায় এটি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো রেস্ট্রিকশন (প্রতিবন্ধকতা) নেই। পশ্চিমবাংলা সরকারও বলে, তাদের পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। কিন্তু সেখানে কিছু অবস্টাকল (বাধা) অবশ্যই আছে। সেটি আমরা কীভাবে সমাধান করতে পারি তা নিয়ে আলোচনা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি অকৃত্রিম, অতুলনীয়। অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক তুলনা করা যায় না। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রক্তের আখরে লেখা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সৈন্যরা রক্ত দিয়েছে। আমাদের এক কোটি মানুষকে ভারতবাসী, ভারত সরকার আশ্রয় দিয়েছিল। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ইতিহাসের পাতায় এগুলো সবসময় লিপিবদ্ধ থাকবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর ব্যবহার করে যাতে উভয় দেশ উপকৃত হয়, বিশেষ করে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো যাতে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারে, সেখানে যে রোড ও রেল সড়কের সংস্কারকাজ চলছে সেগুলো যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ও মাস কমিউনিকেশন সেক্টরে ভারত আমাদের কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সেটা নিয়েও আলোচনা করেছি। তিনি অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছেন, যে প্রস্তাবগুলো অত্যন্ত চমৎকার মনে হয়েছে। এছাড়া সাংবাদিকদের আদান-প্রদান, বিশেষ করে নারী সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও আদান-প্রদানের ওপর একটি কর্মসূচি শুরু করতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া সাংবাদিকদের আদান-প্রদান বিশেষ করে নারী সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও আদান-প্রদানের ওপর তারা একটা কর্মসূচি শুরু করতে চায়। আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকেশনের ওপর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান দিয়ে একটি ডিপার্টমেন্ট খোলার ব্যাপারে সাহায্য করতে চায়। হাইকমিশনারের শ্বশুর বাড়ি চট্টগ্রাম। তিনি (হাইকমিশনার) বললেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যদি রাজি থাকে তারা সেখানে হেল্প করতে পারে। সেই কথাও তিনি আলোচনা করেছেন।’
সান নিউজ/এম/এস