নিউজ ডেস্ক : বিদেশে ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য সহযোগীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দেশসমূহের অব্যাহত ও হতাশাজনক ব্যর্থতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সরকারকে সতর্ক করে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে টিআইবি।
মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘এটি খুবই হতাশাজনক যে, বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানীকারক দেশগুলো বিদেশে ঘুষ লেনদেন বন্ধের বিষয়ে তাদের প্রদত্ত আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পালনে আশংকাজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থ দেশগুলোর তালিকায় সবচেয়ে দূর্বল অবস্থানে থাকা চীন, জাপান, ভারত, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ নেদারল্যান্ড, কানাডা ও মেক্সিকোর মত দেশগুলোর অনেকেই বাংলাদেশের বৃহত্তম বানিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগী। তাই বৈদেশিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবিরোধী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ এবং অন্যান্য সকল অংশীজনদের সতর্ক করছি।’
তিনি আরও বলেন, যেসব দেশ জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন (UNCAC) এবং ওইসিডির ঘুষবিরোধী কনভেনশন অনুযায়ী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাদের কূটনৈতিক মিশন ও অন্যান্য প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমরা বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
এছাড়া উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা অর্থ পাচারসহ নানা ধরণের ব্যাপক ক্ষতির ঝুঁকির বিষয়েও সরকারকে সতর্ক থাকার তাগিদ জানিয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্য সহযোগী রাষ্ট্রগুলোকে তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, নিজস্ব আইন ও তার প্রয়োগ শক্তিশালী করারও আহ্বান জানিয়েছে তারা।
টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের বিষয়ে জি-২০ এর অন্তর্ভূক্ত দেশসমূহের অর্ধেকই আশংকাজনকভাবে দূর্বল অবস্থানে রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানীকারক দেশগুলোর মধ্যে খুব স্বল্প সংখ্যকই বিদেশে ঘুষ লেনদেনকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
বার্লিনে অবস্থিত টিআই সচিবালয় পরিচালিত দ্বিবার্ষিক 'দুর্নীতি রপ্তানি ২০২০ ওইসিডি ঘুষবিরোধী কনভেনশন প্রয়োগের মূল্যায়ন' শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৮ সালের পর থেকে বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে সক্রিয় আইন প্রয়োগের উদহারণ আশংকাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
এ সময়কালে বৈদেশিক ঘুষ এবং এর সাথে সম্পৃক্ত অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া শীর্ষ রপ্তানীকারক দেশের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশেরও বেশি কমেছে। গবেষণায় অর্ন্তভূক্ত ৪৭টি দেশের মধ্যে বিশ্বের রপ্তানি বাণিজ্যের ১৬.৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করা মাত্র ৪টি দেশ বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে আইন প্রয়োগ করেছে। অথচ ২০১৮ সালে এমন দেশের সংখ্যা ছিলো ৭টি, যারা মোট বৈদেশিক রপ্তানি বাণিজ্যের ২৭ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করতো। বাস্তবিকভাবে ৪৭টি দেশের মধ্যে ৩৪টি দেশ কার্যত এ সংক্রান্ত আইনের কোনো প্রয়োগই করেনি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ চীন ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে একটি তদন্তও শুরু করতে পারেনি, অথচ চীনা কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে বেশকিছু কেলেঙ্কারীর অভিযোগ রয়েছে এবং অনেক দেশই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সময়কালে ওইসিডি বহির্ভূত কিন্তু রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ আরো দুটি দেশ ভারত ও হংকংও বৈদেশিক ঘুষ লেনদেনের বিরুদ্ধে একটিও তদন্ত করে নি। গত চার বছরে সিঙ্গাপুর মাত্র একটি ঘটনায় তদন্ত করেছে এবং একটি মামলায় শাস্তি নিশ্চিত করতে পেরেছে।
প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা এমনিতেই সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির চক্রে আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ। এই প্রেক্ষিতে বিদেশী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতিপ্রবণ চর্চা পরিস্থিতিকে আরো প্রকট করে তুলবে। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার ও অন্যান্য অংশীজনদের জন্য যে কোন বিদেশী প্রতিষ্ঠান/সংস্থার সঙ্গে সব ধরণের ব্যবসা ও বিনিয়োগ কার্যক্রমে দুর্নীতিবিরোধী চর্চাসমূহকে জোরালোভাবে মূলধারাভূক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
সান নিউজ/এম/এস