সান নিউজ ডেস্ক:
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের হওয়া তিনটি মামলাসহ মোট পাঁচ মামলার আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এগুলোর মধ্যে জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেই কেবল তাঁর সাজা হয়েছে নিম্ন আদালতে। আর সেটিতেই তিনি বর্তমানে সাজা ভোগ করছেন। তাঁর মুক্তির জন্য আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলনের চেষ্টায় বিএনপি।
এই অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির প্রক্রিয়া চলছে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায়। আজ মামলার অভিযোগ গঠনে শুনানির দিন ধার্য থাকলেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের অসুস্থতার কারণে তাঁকে আদালতে হাজির করা যায়নি। তাই খালেদা জিয়াসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২৯ মার্চ।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে কেরানীগঞ্জে অস্থায়ী ঢাকার দুই নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এ এইচ এম রুহুল ইমরান এ দিন ধার্য করেন।
মামলার আসামি খালেদা জিয়া রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে আদালতে উপস্থিত করা হয়নি বলে সকালে আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানীর জন্য রাষ্ট্রপক্ষ সময়ের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে নতুন দিন ধার্য করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয়। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা:
এই মামলার অভিযোগ ছিল খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তার স্বামীর নামে প্রতিষ্ঠিত এক দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে দুই কোটি ৫৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট নামের ওই দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে সরসরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। এর পাশাপাশি তার পুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরও চারজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বমোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানা দিতেও নির্দেশ দেয় আদালত।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা:
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করা হয় ২০০৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। মামলার মূল অভিযোগ- প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় মিসেস জিয়া তার ক্ষমতা অপব্যবহার করে এই ট্রাস্টের জন্য ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার তহবিল জোগাড় করেছিলেন। মামলাটি এখনও চলমান।
নাইকো মামলা:
কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সাথে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চুক্তি করে রাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাার কোটি টাকা লোকসান করার এই মামলাটি হয় ২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত সরকারের সময়। মামলায় শেখ হাসিনাকেও আসামী করা হয়েছিল, কারণ এই চুক্তিটি প্রথম করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারগঠনের পর শেখ হাসিনা আদালতের মাধ্যমে এই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান। তবে মামলাটি রয়ে যায় এবং আসামী হিসাবে থেকে যান খালেদা জিয়া।
গ্যাটকো মামলা:
ঢাকার কমলাপুরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ‘গ্যাটকো’ নামে একটি কোম্পানিকে দেওয়ার অভিযোগে এই মামলাটিও হয় ২০০৭ পরবর্তী সেনা-সমর্থিত সরকারের সময়, যার আসমিও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।