সান নিউজ ডেস্ক:
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যার্থ হন। তবে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০১৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোয়ারের মধ্যেও জয়লাভ করে আলোচনার জন্ম দেন তিনি। যদিও শোনা যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সমর্থনেই সেবার নৌকা ছাড়াই নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যান শহিদুল ইসলাম। আবারও তিনি নতুন করে আলোচনায় এসেছেন দেশে এবং বিদেশে।
কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সেদেশের স্থানীয় গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে যে, কুয়েতে মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ে অভিযুক্ত তিন বাংলাদেশির মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দুইজন দেশে ‘পালিয়ে’ আসেন। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম। গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর আগেই তিনি দেশে চলে যান।
গত বুধবার কুয়েতি পত্রিকা আল কাবাস, আরব টাইমস ও কুয়েতি টাইমসে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে করা প্রতিবেদনগুলোতে প্রকাশিত খবরে তিনজনের কথা উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যের কথাও উল্লেখ করা রয়েছে।
কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত সাংসদের নাম কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল।
কুয়েতে সিআইডির বরাত দিয়ে বলা হয়, স্বতন্ত্র এই সাংসদসহ তিনজনের ওই চক্রটি এরমধ্যে ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে কুয়েতে প্রেরণ করেন। এর মাধ্যমে তারা ৫০ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সমান।
এদিকে কুয়েতে মানবপাচার সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনকে ‘ফেক নিউজ’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রথমে তিনি বলেন, “যে সংসদ সদস্যের কথা বললেন, আমরা শুনেছি যে এটা ফেইক নিউজ।”
পরে আবার এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সরকারের কাছে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। আমাদের মিশন এখনো খবর দেয়নি, আমরা এখনো জানি না। তবে এটা বোধহয় কোনো একটা পত্রিকাতে বের হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ওই পত্রিকাই বোধহয় বলেছে যে, এটার সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ আছে।”
কাজী শহিদ ইসলাম জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ‘মারাফী কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজ’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী। এ ছাড়া তিনি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এনআরবি সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানিরও চেয়ারম্যান।
কুয়েতের গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়, ব্যবসার কারণে তিনি নিয়মিতভাবে কুয়েত ও বাংলাদেশে আসা যাওয়া করেন। জানা গেছে এই সংসদ সদস্য কখনো কুয়েতে ৪৮ ঘণ্টার বেশি অবস্থান করেন না। সূত্র জানায়, কুয়েতে তার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ মাস ধরে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে না।
প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়, কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানির জন্য সরকারি কার্যাদেশ পেতে ঘুষ হিসেবে সেখানকার সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাদের পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়িও নাকি উপহার দিয়েছেন তিনি। কুয়েতের সিআইডি তদন্ত করে জানতে পারে এই তিনজনের মধ্যে বাংলাদেশি কর্মীদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত।
এ ব্যাপারে সাংসদ শহিদ ইসলাম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি একজন সংসদ সদস্য, এবার নির্বাচিত হওয়ার পর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি মানবপাচারের মতো কোন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নই।
এ বিষয়ে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম বলেন, এ বিষয়ে জানতে কুয়েত সিআইডির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। তদন্ত চলমান থাকায় এ মুহূর্তে তারা দূতাবাসকে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
তবে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দূতাবাসের অন্য একটি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আটক বাংলাদেশির মাধ্যমে ওই অপরাধী চক্রের মানব পাচারে যুক্ত থাকার বিষয়টি সিআইডি দূতাবাসকে জানিয়েছে। ।
স্বতন্ত্র এই সাংসদ আওয়ামী লীগ কুয়েতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বলে জানা গেছে।
সান নিউজ/সালি