সংস্কার প্রস্তাবে বাংলাদেশের সাংবিধানিক নামের পরিবর্তন চেয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নাম পরিবর্তন করে পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ বা বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র নামকরণের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় দলের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এ প্রস্তাবনা জমা দেন।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের কাছে তারা লিখিত মতামত দেন। লিখিত মতামতে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রের নামের মধ্যে যেন জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার দর্শন প্রতিফলিত হয়, সে জন্য পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ নামটি প্রস্তাব করছি আমরা।
এ বিষয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন জানান, জাতীয় পর্যায়ে আত্মশুদ্ধি না থাকলে মানুষ সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক হতে পারে। এ জন্য সব পর্যায়ে আত্মশুদ্ধি বা শুদ্ধাচারের কথা বলেছি। শুদ্ধাচার, জবাবদিহিতা, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৪টি প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। চারটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে, বিবেকের কাছে, জনগণের কাছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
বিদ্যমান আইনে দুর্নীতি, দুঃশাসন, চুরি, ধর্ষণসহ অন্যায়-অনাচার বন্ধ করা যায়নি জানিয়ে তা বন্ধে শরিয়াহ আইন করার দাবি জানান তিনি। আশরাফ আলী আকন বলেন, শরিয়াহ আইনে সর্বজনীন, সবধর্মের বিষয়ে বিধান আছে। যা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে অত্যন্ত কার্যকর। বিএনপিও শরিয়াহ আইনে একমত, তারা শরিয়াহ বিরোধী আইন করবে না বলে আমাদের জানিয়েছে।
সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সব নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক হারে চাই। স্থায়ীভাবে স্বৈরাচার প্রতিরোধ করাই কার্যকর পদ্ধতি। সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি পদেও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের প্রস্তাব ইসলামী আন্দোলন করেছে বলে জানিয়েছেন আশরাফ আলী আকন।
বিচার বিভাগীয় ২৩টি প্রস্তাবের মধ্যে ২১টির সঙ্গেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে একমত পোষণ করেছে। এর বাইরে শরীয়াহ কোর্ট স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং প্রমাণিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সম্মতিকে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনের সুপারিশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে একটা জনকল্যাণ রাষ্ট্র। জনকল্যাণ নামটা দেখলে মানুষের মনে যাতে অকল্যাণ কোন চিন্তা না আসে, এ জন্য আমরা পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশের প্রস্তাব করেছি।
আগামী শনিবার থেকে প্রতিদিনই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একাধিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করবো। তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা করবো।
প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে কমিশন।