নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্যাংক বা অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মতো ঘটনার কথা হরহামেশাই শোনা যায়। কিন্তু নায়ক বা নায়িকার ফেইজবুক পেজ হ্যাক করেও লাখ লাখ আয় করে আসছিল `টিম সিলেট' নামে একটি গ্রুপ।
‘টিম সিলেট' নামের গ্রুপটি দীর্ঘদিন ধরে এ কাজে জড়িত। এ কাজে তাদের এক একজনের মাসিক আয় হতো লাখ টাকার উপরে। দলের মূল হোতা নাসির থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। বাকি সদস্যরা হলো মীর মাসুদ রানা, সৌরভ, বাবলু রহমান, আতিক, জেইনা রাইহান, আফরাজ মিম আশা, সারাকা মজুমদার, সিনথিয়া, তানভি, সুমাইয়া ও রুবি।
তাদের মূল টার্গেট ছিলো বাংলা চলচ্চিত্রের নাম করা সব নায়ক-নায়িকারা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি তাদের। সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি’র এক অভিযোগে এই গ্রুপের দুই সদস্য মীর মাসুদ রানা (৩৫) ও সৌরভকে (১৯) গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান।
র্যাব-২ এর একটি দল শনিবার সকালে রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৪ টি মোবাইল, ১ টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন কোম্পানির ২০টি সিম কার্ড, নকল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরির অ্যাপস এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র শিল্পীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার আলামত জব্দ করা হয়।
এর আগে এ ঘটনায় র্যাবের কাছে অভিযোগ আসে শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানসহ বেশ কয়েকজন নায়ক-নায়িকার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অর্থ আদায় করছে চক্রটি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব-২ এর একটি দল অনুসন্ধানে নেমে ‘টিম সিলেট’ নামে এই গ্রুপের সন্ধান পায়।
র্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক জাহিদ আহসান বলেন, ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়। হ্যাকাররা সেলিব্রিটিদের পুরো নাম, জন্ম তারিখ, ই-মেইল সংগ্রহ করার পরই শুরু করে মিশন। পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুয়া কপি বানিয়ে হ্যাক করতো ফেসবুক আইডি। গ্রুপের বাকি সদস্যদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, ফেসবুক হ্যাক করা এই গ্রুপটির প্রধান হলো যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাসির। সে সম্প্রতি সাইবার অপরাধের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের হাতেও গ্রেফতার হয়েছিল। নাসির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হ্যাকিং শেখাতো। অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর এই গ্রুপটি গড়ে তোলে সে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রানা ও সৌরভ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকেই নাসির অনলাইনে ভিডিও টিউটরিয়ালের মাধ্যমে ফেসবুক আইডি হ্যাক করার পুরো প্রক্রিয়াটি শেখায়। তারা ইতোমধ্যে চলচ্চিত্র শিল্পী মিশা সওদাগর, জায়েদ খান, রিয়াজ, শাহনুর, আঁচল, রেসি, কেয়া, মাহি, বিপাশাসহ বেশ কয়েকজন নামী শিল্পীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছিল। চলচ্চিত্র তারকা ছাড়াও তারা নিয়মিত সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডিও হ্যাক করতো। এসব আইডি ফেরত দেওয়ার নামে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতো চক্রটি।
র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, হ্যাকাররা যে ফেসবুক আইডি দখলে নিতে চায়, প্রথমে সেটির বিরুদ্ধে মিথ্যা কারণ দেখিয় সম্মিলিতভাবে রিপোর্ট করে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আইডিটি নিষ্ক্রিয় করার পর তারা নিজেদের ই-মেইল ব্যবহার করে সেটি পুনরুদ্ধার করে। এজন্য তারা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে পাঠায়। নিজের দখলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড, ব্যবহৃত ই-মেইল ও ফোন নম্বরও পরিবর্তন করে দেয় তারা। পরে মূল মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যক্তি ভেদে অর্থের বিনিময়ে আইডি ফেরত দিত। কেউ অর্থ না দিলে হ্যাকাররা তাদের ফেসবুক আইডি থেকে পরিচিত লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনদের অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে সম্মানহানি করার চেষ্টা করে। কারও মেসেঞ্জারে যদি গোপন কোন ছবি থাকে তাহলে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েও অর্থ আদায় করতো এই চক্রটি।
সান নিউজ/সালি