সান নিউজ ডেস্ক:
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারত থেকে পিতার সঙ্গে বিয়ের জন্য বাংলাদেশে ফিরছিলেন ফেলানি। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় কিশোরী ফেলানির জামা কাঁটাতারে আটকে গিয়েছিল। এই সময় বিএসএফ জওয়ান অমিয় ঘোষ কোনওরকম প্ররোচণা ছাড়াই গুলি চালিয়ে বাংলাদেশি কিশোরীকে হত্যা করেছিল। সেই সময় কিশোরীর গুলিবিদ্ধ দেহটি কাঁটাতার থেকে ঝুলছিল পাঁচ ঘন্টা ধরে । সীমান্তের কাটাতারে এক কিশোরীর মরদেহ ঝুলে থাকার সেই দৃশ্য নাড়িয়ে তুলেছিলো বিশ্ব বিবেককে। প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন ভারতের শুভ বোধসম্পন্ন মানুষেরাও।
ওই ঘটনায় বিএসএফের অমিয় ঘোষ নামে যে কনস্টেবল গুলি চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু বাহিনীর নিজস্ব বিচার প্রক্রিয়ায় অব্যাহতি পান অমিয় ঘোষ ।
সেই অব্যাহতিকে চ্যালেঞ্জ করেই ভারতের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন সুপ্রিম কোর্টের শরাণাপন্ন হয়। ২০১৫ সালের ২ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে ফেলানি হত্যার বিচার চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানি খাতুন হত্যা মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সিনিয়র বিচারপতি ড. ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি কেএম জোসেফকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
সুপ্রিম কোর্টের কাগজপত্রে অবশ্য মামলাটি ‘মুহম্মদ নূর ইসলাম (ও আরও একজন ব্যক্তি) বনাম ভারত রাষ্ট্র (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়)’ নামেই নথিবদ্ধ হয়েছে।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফেলানি হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএসএফকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তার যুক্তি, শীতের সকালে ঘন কুয়াশার কারণে বিএসএফ সদস্যরা ফেলানিকে দেখতে পাননি, তারা চোরাকারবারি সন্দেহেই কাঁটাতারের বেড়া টপকানোর সময় গুলি চালিয়েছিলেন।
মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ১৮ মার্চ। ওই দিন বাদী পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি ও সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করার কথা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংস্থা-মাসুম ও তার কর্ণধার কিরীটি রায় এই মামলার অন্যতম পক্ষ। তিনি বলেন, ‘এতদিন বাদে যে ধুলো ঝেড়ে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার কাগজপত্র টেনে বের করলেন, সেটাকে আমরা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছি।
‘আমরা এখনও সুপ্রিম কোর্টের ওপর ভরসা হারাতে রাজি নই। যতই দেরি হোক, ভারতের শীর্ষ আদালতে ফেলানির পরিবার সুবিচার পাবেন এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা মামলা চালিয়ে যাবো’। বলেন কিরীটি রায়।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে প্রতি মাসেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশিরা। সমালোচনার পরও বন্ধ হয়নি সীমান্তে হত্যাকাণ্ড। দিনদিন বাড়ছে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা। অথচ বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো বন্ধু দাবি বলে নিজেকে দাবি করে থাকে ভারত।
ফেলানিকে হিত্যার পর থেকে সীমান্তে হত্যার বিষয়ে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়ে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। এত সমালোচনারপরও বন্ধ হয়নি সীমান্তে হত্যাকাণ্ড। প্রতি মাসেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে মারা যাচ্ছে বাংলাদেশিরা। দিনদিন বাড়ছে হত্যার সংখ্যা।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও অধিকার বলছে, প্রতি ছয় মাসে বিএসএফের গুলিতে গড়ে ১৮ জনের প্রাণ হানীরা ঘটনা ঘটছে। ২০১৯ সালে বিএসএফ'র হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৮ জন বাংলাদেশি। এরমধ্যে গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৩ জন এবং বাকি ৫ জনকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। ২০১৮ সালে সীমান্তে এমন প্রাণহানির সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ জন। সে হিসেবে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে প্রাণহানির সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে।