মেহেদী হাসান : ‘নয়ন বন্ডের পৃষ্ঠপোষকদের মাদক কেলেঙ্কারি আড়াল করতেই আমার মেয়েকে বলির পাঠা করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বরগুনার আলোচিত রিফাত শরিফ হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ও নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। মিন্নির রায় ও উচ্চ আদালতে আপিল বিষয়ে সান নিউজের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন তিনি।
শুরু থেকেই তার দাবি- মিন্নি নির্দোষ। তার এই রকম দাবির পেছনে কারন জানতে চাইলে তিনি সান নিউজকে বলেন, 'ঘটনার শুরু থেকেই আমরা একটি নির্দিষ্ট কুচক্রী মহল থেকে চাপ পেয়ে আসছি। এই চাপের ফলে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে বিতর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ বিষয়টি আমাদের আইনজীবী আদালতে তুলে ধরলেও আদালত তা আমলে নেননি।'
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরিফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশের বিপক্ষে আবেদন করতে হাইকোর্টে এসেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। রোববার (৪ অক্টোবর) সকালে হাইকোর্টে আসেন তিনি।
গতকাল শনিবার (০৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রিফাত হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ৪২৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এই রায়ের কপি সর্বপ্রথম হাতে পেয়েছেন মামলার অন্যতম আসামি ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
রোববার সকালে মিন্নিসহ ৬ আসামির ডেথ রেফারেন্স নথি হাইকোর্টে পৌঁছায়। নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়। রায়ের কপি হাইকোর্টে আসার পর আসামিরা সাত দিনের মধ্যে আপিল আবেদন করতে পারবেন।
উচ্চ আদালতে আপিলের ব্যাপারে মিন্নির বাবা সান নিউজকে বলেন, 'আবেদনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবং আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চার বারের নির্বাচিত সদস্য জেড আই খান পান্নার সাথে ইতিমধ্যে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি এখন যা সিদ্ধান্ত দেবেন তাই আমরা করবো।'
মিন্নির বাবা শুরু থেকেই মিন্নিকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন, এর পেছনে তার দাবি জানতে চাইলে তিনি সান নিউজকে বলেন, 'ঘটনার শুরু থেকেই আমরা একটি নির্দিষ্ট কুচক্রী মহল থেকে চাপ পেয়ে আসছি। এই চাপের ফলে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে বিতর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ বিষয়টি আমাদের আইনজীবী আদালতে তুলে ধরলেও আদালত তা আমলে নেননি।'
তবে কি আদালত প্রভাবিত হয়ে রায় দিয়েছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আদালতের রায়ের প্রতি আমাদের যথাযথ সম্মান আছে। তবে আমরা এ রায় মানি না। আমরা আশা করি উচ্চ আদালতে আমরা নিরপেক্ষ এবং সঠিক বিচার পাব।'
সাক্ষাৎকারে নয়ন বন্ডের প্রসঙ্গ আসতেই তিনি বলেন, 'সত্যি কথা বলতে কি, বরগুনার একটি নির্দিষ্ট কুচক্রী মহল মাদক ব্যবসার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা এবং মাদক প্রসারে নয়ন বন্ডের ভূমিকাকে ধামা চাপা দিতেই মিন্নিকে নিয়ে সব রকমের ষড়যন্ত্র করে আসছে শুরু থেকেই। শুধু তাই নয়, নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির বিয়ের গুজব, তার সাথে মিন্নির সম্পর্ককে অতিরঞ্জিত করে ছড়িয়ে দেওয়া, ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সামনে এনে সেই মহলটি ঘটনাটিকে পুরোপুরো অন্যখাতে প্রবাহিত করেছে।
মিন্নির দ্বিতীয় বিয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিফাতের সাথে মিন্নির বিয়ে বরগুনা আলিয়া মাদ্রাসায় ঘটা করে সম্পন্ন হয়েছে। পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, মিন্নির সাথে যদি নয়ন বন্ডের বিয়েই হয়ে থাকতো তাহলে বিয়ের দিন সে কেন সামনে এসে মিন্নিকে দাবি করলো না? এ সব কিছু একটি মহলের ইশারায় হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রী আয়শার সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার পর রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় পুত্রবধূ মিন্নিকে।
মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ওই বছরের ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এরপর মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ি থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনসে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
আলোচিত এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার তৎকালীন পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন।
তার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে মিন্নিকে ৭ নম্বর আসামি করা হয়।
সেই প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিচার শুরু হয় বরগুনা জেলা ও দায়রা আদালতে। সর্বশেষ গত বুধবার বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অন্য চার আসামিকে খালাস দেয়া হয়।
পুলিশের দেয়া আরেকটি চার্জশিট অনুযায়ী অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিচার চলছে শিশু আদালতে।
সান নিউজ/বিএম/এস